ময়মনসিংহে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে বাসাবাড়িতে কিশোর দলের হামলা-ভাঙচুর, আতঙ্কিত বাসিন্দারা

ময়মনসিংহ নগরের হরিকিশোর রায় রোডে বাসাবাড়িতে দেশি অস্ত্র নিয়ে কিশোর দলের হামলা। গতকাল সন্ধ্যায়ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া

দেশি অস্ত্র নিয়ে রাস্তার দুই পাশের বাসাবাড়িতে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে একদল কিশোর। দলটি প্রায় ৫০ জনের, আর সবারই মুখে মাস্ক। তারা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, আশপাশের বাড়িঘরের দেয়াল, বারান্দা, জানালা-দরজা, বাতি, সিসিটিভি ক্যামেরা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে। কেউ রাস্তা থেকে ইটের টুকরা নিয়ে ঢিল ছুড়ছে বাড়িঘরে। স্থানীয় বাসিন্দারা দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতর চুপচাপ বসে আছেন।

ময়মনসিংহ নগরের হরিকিশোর রায় রোডের বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজে এমন দৃশ্য ধরা পড়েছে। আর স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কয়েক দফায় হামলা-ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নগরের হরিকিশোর রায় রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের পেছনে শিশু একাডেমি মাঠ থেকেই মূলত ঘটনার সূত্রপাত। গতকাল সন্ধ্যার আগে সেখানে কিশোরদের একটি দল বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় কিশোরদের আরেকটি দল সেখানে গিয়ে বসার জায়গা ছেড়ে দিতে বলে। বিষয়টি নিয়ে নগরের বাগানবাড়ি এলাকার মৃদুল করের সঙ্গে নওমহল এলাকার শুভ্রর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মৃদুলকে মারধর করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর দলবল নিয়ে ফাহাদের বাসার গলিতে হামলা করে মৃদুল। এ সময় ১৫টি বাড়ি ও ২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আলী আশরাফ খান বলেন, টেবিলে বসা নিয়ে কিশোর গ্যাংটির সদস্যরা ‘আওয়ামী লীগ’ ও ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে হামলা চালায়। কিন্তু তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। ঘটনার পর বিএনপির নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

কয়েক দফা হামলার পর একটি বাড়ির জানালার ক্ষতচিহ্ন। আজ বুধবার সকালে ময়মনসিংহ নগরের হরিকিশোর রায় রোডে
ছবি: প্রথম আলো

আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙচুরের চিহ্ন ছড়িয়ে আছে এলাকাজুড়ে। বাড়ির গেট, বারান্দা, টিনের দেয়াল, জানালার গ্লাস, সিসিটিভি ক্যামেরায় ভাঙচুরের ক্ষতচিহ্ন।

মালতি রানী ঘোষ নামের এক নারী বাসিন্দা বলেন, ‘বাচ্চাদের সামান্য ঝামেলা নিয়ে এলাকার বাসাবাড়িতে হামলা করা হয়। অন্তত ৫০ জনের দলটি চার দফা হামলা চালিয়েছে। বাড়ির বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ করে খুব ভয়ে ছিলাম। এখনো খুব আতঙ্কে আছি।’

দিলীপ ঘোষ নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনীতি করি না, কোনো ঝামেলায় যাই না। কেন আমাদের বাড়িঘরে হামলা করা হলো?’

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম খান বলেন, টেবিলে বসা নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। হামলার সঙ্গে জড়িত কিশোর দলের সদস্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।