বেড়ানোর পাশাপাশি পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে চান? কোথায় মিলবে জেনে নিন

নানা পদের খাবার সাজানো টেবিলে। খাগড়াছড়ি শহরের সিস্টেম রেস্তোরাঁয়ছবি: প্রথম আলো

পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ভ্রমণপিপাসুরা সেখানকার খাবারের স্বাদ নিতে ভোলেন না। আবার ভোজনরসিকদের অনেকেই পাহাড়ে আসেন পাহাড়ি খাবারের স্বাদ চেখে দেখার জন্য। যাঁরা পাহাড়ে ঘুরতে এসে কোথায় খাবেন—এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন, তাদের জন্য রয়েছে নানা রেস্তোরাঁর বাহারি আয়োজন। খাগড়াছড়ি শহরেই কোথায় মিলবে পাহাড়ি খাবার আর আতিথেয়তা, চলুন জেনে নিই।

সিস্টেম রেস্তোরাঁ

দৃষ্টিনন্দন কাঠের তৈরি ডুপ্লেক্স বাড়িটি দেখলেই মনে হবে—কারও থাকার ঘর এটি। কিন্তু কাছে গিয়ে দেয়ালের নামফলক দেখলেই চেনা যায়, এটা একটি রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই প্রথমেই নজরে আসবে বাঁশ, বেত আর পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত জিনিস দিয়ে সাজানো অন্দরমহল। খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়াপাড়ার সিস্টেম রেস্তোরাঁ বেশ বিখ্যাত।

পাহাড়ের জুমের চালের ভাত, পাহাড়ি মুরগি, হাঁস ভুনা, শুঁটকি ভর্তা, পাচন, পাহাড়ি শাক আর ছোট মাছ নিয়মিত রান্না হয়। তবে শুক্রবার আর শনিবার মেনুতে আরও কয়েকটি বিশেষ খাবারের পদ যোগ করা হয়। এখানকার খাবারে যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি এগুলো খেতেও ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের। সিস্টেমের মাছ রাঙামাটির কাপ্তাই লেক আর পাহাড়ের ছোট ছোট ঝিরি আর ছড়া থেকে আসে। রেস্তোরাঁটি পাহাড়ি খাবারের হলেও এখানে পর্যটক ও বাঙালি অতিথির সংখ্যাই বেশি থাকে।

কঁচি বাঁশের তরকারি
ছবি: প্রথম আলো

প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫টির মতো খাবারের পদ রান্না হয় এখানে। মূলত যখন যে মৌসুম চলে, সে অনুযায়ী বাজার আর রান্না করা হয়। কলাপাতায় ছোট মাছ, পাহাড়ি মুরগি, হাঁস কষা, থানকুনি ভর্তা, মাশরুম ভেজিটেবল ফ্রাই, ছুরি শুঁটকি ভর্তা, কাঁঠালের তরকারি, পাঁচমিশালি সবজি, সবজি সেদ্ধ বা আপ্রেইং, লাউ-চিংড়ি, পাহাড়ি আলুসহ আরও নানা কিছু থাকে রোজকার তালিকায়। এসব রান্নায় তেল-মসলার ব্যবহার খুব কম। তরকারিগুলো একটু শুকনা শুকনা, ঝোল ছাড়া হয়। আর ডাল থাকে সব সময়। তবে কেউ যদি অর্ডার করেন, তবে রান্না করে দেওয়া হয় তাদের পছন্দ অনুযায়ী। চাইলে হোম ডেলিভারিও নিতে পারবেন।

বাঁশের খোলে রান্নার পর পরিবেশনের জন্য ঢালছেন রেস্তোঁরার এক কর্মী
ছবি: প্রথম আলো

ব্যাম্বু শুট

শহরের মহাজনপাড়া এলাকায় ব্যাম্বু শুট রেস্তোরাঁটি অবস্থিত। ছিমছাম এই রেস্তোরাঁ সাজানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দনভাবে। নানা রঙের বার্মিজ ছাতা আর পাহাড়ের নিজস্ব কুটিরশিল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে রেস্তোরাঁটি। এ রেস্তোরাঁয় খাবারের স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি অনেকে আসেন শুধু ছবি তুলতে।

যাঁরা পাহাড়ে ঘুরতে এসে পাহাড়ি রান্নার স্বাদ নিতে চান, তাঁদের কথা চিন্তা করেই করা হয়েছে রেস্তোরাঁটি। তাদের সবচেয়ে ভালো দিক হলো প্রতিদিনের বাজার প্রতিদিনই করা হয়, আর সেভাবেই ঠিক করা হয় মেনু। অতিথিরা খাবার মুখে দিলেই বুঝবেন টাটকা স্বাদ। এ রেস্তোরাঁয় খাবারের বিভিন্ন ফিউশন দেখা যায়। ব্যাম্বু শুটের হালকা ফ্রাইয়ের সঙ্গে লেমন গ্রাসের সুঘ্রাণ, পাহাড়ি মুরগি, হাঁস, কাপ্তাই লেকের বাহারি মাছ, চিংড়ি দিয়ে কাঁঠাল, পাচনসহ বেশ কিছু পাহাড়ি ও আঞ্চলিক খাবার মিলবে এখানে। বিকেলের নাশতায় মিলবে মুন্ডি (নুডলস), পিঠা, মোমো। রেস্তোরাঁয় আছে একটা জুস কর্নারও। এখানে পাবেন পাহাড়ি তাজা ফল আর ফলের জুস।

জিভে জল আনা ছুরি শুঁটকির ভর্তা
ছবি: প্রথম আলো

হেরিটেজ ডাইং

খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়াপাড়ার শেষ মাথায় নান্দনিক এই রেস্তোরাঁর অবস্থান। এটি তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট আস্ত সেগুনগাছ দিয়ে। এ রেস্তোরাঁর মূল আকর্ষণ হচ্ছে মেঝেতে বসে খাওয়া। আর তাদের জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে তেঁতুলের জুস। এখানে সব সময় মুরগি, হাঁস, কবুতর, ছোট মাছ, মাছ ভাজি, মিক্সড সবজি, শাকভাজি পাওয়া যায়।

কাঠ, বেত ও বাঁশের অন্দরসজ্জায় অন্য রকম পরিবেশ হেরিটেজ ডাইনের
ছবি: প্রথম আলো

কল্যাণী রেস্তোরাঁ

মহাজনপাড়া এলাকায় ছোট ও আরামদায়ক একটা রেস্তোরাঁ কল্যাণী। সব মিলিয়ে ১৫ জন একসঙ্গে খাওয়া যায়। তাদের পরিবেশনও চমৎকার। স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রতিদিন বাজার করেন আর নিজেরা রান্না করেন। পাহাড়ি খাবারের জন্য এটি বেশ জনপ্রিয়। এখানে প্রায় সব খাবারে শুঁটকির আধিক্য থাকে। এ ছাড়া আছে মাছ, মাংস ও সবজি। শুঁটকির ভর্তার সঙ্গে মেশানো হয় পাহাড়ি ঝাল মরিচ, খেতে চমৎকার লাগে। তাদের জনপ্রিয় আইটেমগুলোর মধ্যে আছে চিংড়ি মরিচ গোদিয়্যে, ইঁচা শুঁটকি-মরিচ বাটা, ইঁচা-ছুরি শুঁটকির তরকারি, বদা হেবাং (ডিমের তরকারি), পাহাড়ি আলু দিয়ে পাহাড়ি মুরগিসহ চাকমাদের মজার মজার সব খাবার। এখানকার মুরগির মাংস ও মরিচ গোদিয়্যে একটু বেশিই জনপ্রিয়।

খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্তোরাঁর রান্না ঘর
ছবি: প্রথম আলো

পাহাড়ি সব রেস্তোরাঁয় আপনি ১২০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে মাছ, মাংস, আর একটা সবজি দিয়ে ভাত খেতে পারবেন পেট ভরে। আর জুসের দাম রেস্তোরাঁভেদে ভিন্ন—৪০-৮০ টাকার মধ্যে। এখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে নির্দিষ্ট কোনো দাম থাকে না। প্রতিদিনের বাজারের দামের ওপর খাবারের দাম নির্ধারণ করা হয়। তবে তা হাতের নাগালের মধ্যেই।

হেরিটেজ ডাইন রেস্তোরাঁর সম্মুখ ভাগে এমন পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে এভাবে
ছবি: প্রথম আলো

পাহাড়ে এসে কেউ বাঙালি খাবার খেতে চাইলে শহরের শাপলা চত্বর এলাকায় মক্কা হোটেল বেশ জনপ্রিয়। এখানে গরু, খাসি, মুরগি, বিরিয়ানি, পোলাওসহ সব বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। এ ছাড়া আছে এফএনএফ, চেঙ্গী, শাপলা, বাঁশঝাড়সহ আরও অনেক রেস্তোরাঁ।