অতিরিক্ত গতি ও উড়াল সড়কের বাঁকের কারণে বাঁ দিকের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে অ্যাম্বুলেন্সের একটি চাকা ফেটে যায়। এতে অ্যাম্বুলেন্সটির নিয়ন্ত্রণ হারান চালক মৃদুল চন্দ্র মালো (২৮)। এভাবে ১৫০ মিটারের মতো চলার পর অ্যাম্বুলেন্সটি ডান পাশের সড়ক বিভাজকে গিয়ে ধাক্কা খায়। পরে চাকার ঘর্ষণ বা ইঞ্জিন থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য জানতে পেরেছে তদন্ত কমিটি। কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত তদন্ত কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থল ভাঙ্গার মালিগ্রাম উড়াল সড়ক পরিদর্শন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।
এর আগে গতকাল ফরিদপুরের ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আগুনে পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি থেকে প্রথমে সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সচালকেরও মৃত্যু হয় হাসপাতালে। এ ঘটনায় গতকাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) বিপুল চন্দ্র দাসকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক।
কমিটির সদস্যরা হলেন জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মারুফ হাসান, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. এমরান খান, ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান ও সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান। দুই কর্মদিবসের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্যের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে, উড়াল সড়কে ওঠার সময় অতিরিক্ত গতি ও বাঁকের কারণে অ্যাম্বুলেন্সটির সঙ্গে সড়কের বাঁ পাশের রেলিংয়ে ধাক্কা লাগে। এতে অ্যাম্বুলেন্সের চাকা রেলিংয়ে ছয় ইঞ্চির মতো ওপরে উঠে গেলে চালক অ্যাম্বুলেন্সটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। পরে গাড়িটি এলোমেলো অবস্থায় প্রায় ১৫০ মিটার পথ অতিক্রম করে উড়াল সড়কের ডান পাশের সড়ক বিভাজকে আঘাত করে। এতে গাড়ির সামনের দিকের একটি চাকা ফেটে যায় ও ইঞ্জিনের তার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে চাকার ঘর্ষণ বা ইঞ্জিন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
তবে অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যাসচালিত এবং তাতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার ছিল। সেগুলোর বিস্ফোরণ না হলেও গ্যাস থাকায় দীর্ঘক্ষণ আগুন জ্বলেছে। ওই সময় অ্যাম্বুলেন্সের দরজা লক হয়ে যাওয়ায় কোনো যাত্রী বের হতে পারেননি। আঘাতের কারণে অ্যাম্বুলেন্সের সামনে ডান পাশে চালকের দরজা খুলে গেলে চালক সড়কে পড়ে যান। তবে তাঁর পা গাড়ির ভেতরে থাকায় তা দগ্ধ হয়।
অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস ঠিক ছিল
দুর্ঘটনাকবলিত অ্যাম্বুলেন্সটি (ঢাকা মেট্রো-ছ-৭১-৪৭০৭) ‘লামিয়া অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস হাসরা হাবেলী গোপালপুর ফরিদপুর সদর’ নামে নিবন্ধিত। অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস ও ট্যাক্সের মেয়াদ হালনাগাদ করা ছিল। এক বছর মেয়াদে নবায়ন করা ফিটনেস ও ট্যাক্সের মেয়াদ আগামী ২৩ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা। ফরিদপুর বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক এনামুল হক বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
এখনো মামলা হয়নি
এক্সপ্রেসওয়ের দুর্ঘটনা নিয়ে আজ সন্ধ্যা ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস, নিবন্ধন ও চালকের লাইসেন্স হালনাগাদ করা ছিল। দুর্ঘটনার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। তিনি বলেন, এ ঘটনায় অবশ্যই মামলা হবে। এক-দুই দিন পরে মামলা হলেও কোনো সমস্যা নেই।
দাফন সম্পন্ন
এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত তাসলিমা বেগমকে (৫০) গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে বোয়ালমারীর গুনবাহা ইউনিয়নের ফেলানগর গ্রামের কবরস্থানে, তাঁর মেয়ে কমলা বেগম (৩০) ও তাঁর তিন সন্তানকে বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়নের মাইট কুমড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে এবং বিউটি বেগম (২৬) ও তাঁর ছেলে মেহেদীকে (১০) আজ সকাল আটটার দিকে আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কুচিয়াগ্রামে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে আজ দুপুর ১২টার দিকে অম্বিকাপুর পৌর শ্মশানঘাটে নিহত অ্যাম্বুলেন্সচালক মৃদুল চন্দ্র মালোর (২৬) শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। মৃদুল ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষ্মীপুর মহল্লার সুভাষ চন্দ্র মালোর ছেলে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। ফরিদপুর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আফরোজা সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।