‘আমি আর গরুর চামড়ার ব্যবসায় নামব না। গড়ে ৪৮০ টাকায় ৩৮টি চামড়া কিনে বিক্রি করতে পারিনি। পরে সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িতে ফেলে দিয়েছি। এত বড় ধাক্কা খাব ভাবিনি। উচিত শিক্ষা হয়েছে।’
এবার কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রির ব্যবসায় লোকসানের মুখোমুখি হওয়ার পর বিমর্ষ মোহাম্মদ মাহবুবুর আলম এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন। চট্টগ্রাম নগরের চৌমুহনী এলাকার আশপাশের বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে বড় আকারের ৩৮টি গরুর চামড়া কিনেছিলেন তিনি। ঈদের দিন ৩৮০ টাকা দাম উঠেছিল, কিন্তু বিক্রি করেননি। এতেই কাল হলো। পরবর্তী সময় ১০০ টাকায় বিক্রি করতে চাইলেও কোনো আড়তদার কেনেননি।
গতকাল মঙ্গলবার মাহবুবুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করছি। লাভ করতে না পারলেও লোকসান হয়নি কখনো। এবার বিক্রিই হলো না। ফলে শপথ নিয়েছি, আর কখনো এ ব্যবসায় নামব না।’
মাহবুবুর আলমের মতো চামড়া কিনে লোকসানে পড়েছেন আরেক ব্যবসায়ী আবদুল হামিদও। তিনি বিভিন্ন আকারের ২৫০টি চামড়া কিনেছিলেন। গড়ে দাম পড়েছিল ৪২০ টাকা। আড়তদার ১০০ টাকা দরে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। পরে নেননি। শেষমেশ পুঁতে ফেলতে হয়েছে।
সবজি বিক্রেতা আবদুল হামিদ ও দোকানি মাহবুবুর বাড়তি লাভের আশায় চামড়া ব্যবসায় নামেন। তাঁদের মতো অনেক বিক্রেতাই এবার চামড়ার দাম পাননি বলে জানিয়েছেন। প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে শতাধিক স্থায়ী ও মৌসুমি ব্যবসায়ী এ ব্যবসায় নামেন। প্রায় প্রতিবছরই চামড়ার দাম তুলে আনতে গলদঘর্ম হয় তাঁদের। এবার অনেকে বিক্রিই করতে পারেননি। অথচ সরকার চামড়া বিক্রির জন্য দর নির্ধারণ করে দিয়েছিল।
ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সাধারণত বড় আকারের গরুর চামড়া ৩১ থেকে ৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১ থেকে ৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬ থেকে ২০ বর্গফুটের হয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, মাঝারি আকারের ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা অন্তত ১ হাজার ২৫০ টাকা। এই হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ গড়ে ২০০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৫০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, মাঝারি আকারের লবণ ছাড়া চামড়ার দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। বড় চামড়ার দাম হওয়ার কথা ছিল অন্তত ৯০০ টাকা। কিন্তু বড় চামড়ার দাম গড়ে ৫০০ টাকাও পড়েনি। কেউ ২৫০ টাকায়, কেউ আবার ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
চামড়া বেচাকেনা নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন মোহাম্মদ রুবেল। ৩০০টি কাঁচা চামড়া তিনি কিনেছিলেন। দাম পড়েছিল গড়ে ৫৭০ টাকা। তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত গড়ে ২৫০ টাকা দরে চামড়াগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। এতে সব মিলিয়ে আমার লাখখানেক টাকা লোকসান হয়েছে।’
চট্টগ্রামে এ বছর প্রায় চার লাখ গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ৫০ হাজারের বেশি ছাগল কোরবানি হয়। এর মধ্যে কিছু চামড়া উপজেলা পর্যায়ে লবণ দিয়ে রাখা হয়। যদিও বেশির ভাগ চামড়া চলে আসে নগরের আতুরার ডিপোর আড়তে। এ ছাড়া গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশও কিছু চামড়া সংগ্রহ করে। সেই চামড়াগুলোও আড়তদারদের আড়তে চলে যায়। এ বছর সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন আড়তদারেরা।
অবশ্য চামড়ার দাম কম পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করতে চাইলেন না বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন। তাঁর দাবি, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম পেয়েছেন। তাঁরা ৭০০ টাকা পর্যন্ত দরে বড় চামড়া কিনে নিয়েছেন। কিছু ব্যবসায়ী এমনিতেই দাম না পাওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন তিনি।