নেত্রকোনায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে অভিযান শুরু

পুলিশের বিশেষায়িত দল কাউন্টার টেররিজম, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট ও সোয়াট ইউনিটের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান শুরু করেছে। আজ রোববার সকালে নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পুলিশের ঘিরে রাখা বাড়িটিতে অভিযান শুরু হয়েছে। আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে পুলিশের বিশেষায়িত দল কাউন্টার টেররিজম, অ্যান্টিটেররিজম ও সোয়াট ইউনিটের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান শুরু করে।

অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের বোমা বিশেষজ্ঞ পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন। অভিযানে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহেদ আহমেদ আছেন।

গতকাল শনিবার বেলা একটার পর থেকে চারদিকে উঁচু প্রাচীরঘেরা দ্বিতল বাড়িটির চারপাশে অবস্থান নেয় পুলিশের একটি দল। তাঁদের ধারণা, ওই বাড়িতে জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা অস্ত্র ও বোমা থাকতে পারে। অবশ্য এরই মধ্যে কিছু সরঞ্জাম উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ শনিবার দুপুরে বাড়িটিতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়িটির একটি কক্ষে একটি বিদেশি পিস্তল, ১৭টি গুলি, প্রচুর পরিমাণ খেলনা পিস্তল, দুটি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া, এক বস্তা জিহাদি বইসহ বিভিন্ন জিনিস পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

এরপর গতকাল রাত আটটার দিকে অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আসাদুল্লাহ চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, বাড়িটিতে তারা একটি সাউন্ডপ্রুফ কক্ষ, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটসহ নানা প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম পেয়েছেন। একটি ব্যায়ামাগার আছে। বাড়িটিতে বোমাজাতীয় বিস্ফোরক দ্রব্য থাকতে পারে।

নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া এলাকায় এই বাড়িতে স্থানীয় কোনো লোকজনকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এই বাড়িতেই আজ জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চলছে
ছবি: প্রথম আলো

আজ রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো, এ বিষয়ে তাঁরা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছেন। এক্সক্লুসিভ বেশ কিছু ডিভাইস পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালে মোহাম্মদপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনার সময় এ রকম কিছু ডিভাইস পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া বিস্ফোরক–জাতীয় কিছু থাকতে পারে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাসাপাড়া এলাকায় অনেকটা নির্জন স্থানে ওই বাড়ি আটপাড়া উপজেলা নোয়াপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নান নামের এক ব্যক্তি প্রায় ২০ বছর আগে নির্মাণ করেন। আবদুল মান্নান ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষক ছিলেন। তিনি সেখানে একটি কলেজ স্থাপন করতে চান। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। দুই বছর আগে বাড়িটি তিনি এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেন। বাড়ির ভেতরে বড় বড় দুটি পুকুর আছে। সেখানে মাছ চাষ করা হয়। এ ছাড়া প্রাচীরের ভেতরে একটি আধা পাকা টিনের ছাউনি ঘর আছে। ভাড়া দেওয়ার পর থেকে ভাড়াটে বাড়ির সীমানাপ্রাচীর আরও উঁচু করেন। এরপর নারকেলগাছ, আমগাছ ধরে সীমানাপ্রাচীরে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। ওই বাড়িতে স্থানীয় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

ঘিরে রাখা বাড়িটির পাশের গ্রাম কাওয়ালিকোনা। ওই গ্রামের চান মিয়া নামের এক যুবক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়িটি দেখে আমাদের অনেক আগে থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল। বাড়িটিতে তিনজন নারী, চার-পাঁচটি বাচ্চা ও তিনজনের মতো পুরুষ অবস্থান করতেন। তাঁরা খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করে চলাফেরা করতেন। গভীর রাতে একটি জিপ গাড়িতে করে প্রায় সময়ই যাওয়া–আসা করতেন লোকজন। স্থানীয় কারও সঙ্গে মিশতেন না। এমনকি বাড়িটির ভেতরে বা সীমানার বাইরে কাউকে আসতে দিতেন না।’