সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের ৮টিতে আওয়ামী লীগের নতুন মুখ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ১৯টি আসনের মধ্যে ৮টিতেই নতুন মুখ এসেছে। এর মধ্যে সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে একটিতে, মৌলভীবাজারের চারটি আসনের মধ্যে দুটিতে, হবিগঞ্জের চারটি আসনের মধ্যে দুটিতে ও সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্যরা বাদ পড়েছেন। তাঁদের জায়গায় নতুন আটজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নতুন মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন সিলেট-৫ (কানাইঘাট–জকিগঞ্জ) আসনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মৌলভীবাজার-৩ (সদর–রাজনগর) আসনে শিল্পপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ–বাহুবল) আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, হবিগঞ্জ-২ (আজমিরীগঞ্জ–বানিয়াচং) আসনে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ময়েজ উদ্দিন শরীফ।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর–ধর্মপাশা–জামালগঞ্জ) আসনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই–শাল্লা) আসনে শাল্লা উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) ছোট ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এবং সুনামগঞ্জ-৪ (সদর–বিশ্বম্ভরপুর) আসনে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ সাদিক নতুন মুখ হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে একেকজন একেক কারণে বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে কারও বয়স বেড়ে গেছে, কেউ এলাকায় নিষ্ক্রিয় আবার কেউ সমালোচিত। এসব বিবেচনায় নিয়ে আসনগুলোয় নতুন মুখ আনা হয়েছে। সিলেট-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার বয়স বেড়ে যাওয়ায় এবার দলীয় মনোনয়ন চাননি।
নতুন মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রার এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন সামান্য কর্মী হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, এটিই আমার কাছে অনেক। যে বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে তিনি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, সেই প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। যখনই যেখানে দায়িত্ব পালন করেছি, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। এখন রাজনীতিতে এসেছি। এখানেও আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাব। আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় দলীয় প্রধানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
বাদ পড়া সংসদ সদস্যরা হলেন সিলেট-৫ আসনে হাফিজ আহমদ মজুমদার, মৌলভীবাজার-৩ আসনে নেছার আহমদ, হবিগঞ্জ-১ আসনে গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, হবিগঞ্জ-২ আসনে আবদুল মজিদ খান, সুনামগঞ্জ-১ আসনে মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন ও সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়া সেনগুপ্ত।
এ ছাড়া মৌলভীবাজার-২ আসনে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী ছিল না। সেখানে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী এম এম শাহীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে গণফোরামের প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মদের কাছে পরাজিত হন। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ-৪ আসনে গতবার মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান লাঙল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বাদ পড়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে জয়া সেনগুপ্ত প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেত্রী যাঁকে ভালো মনে করেছেন, তাঁকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। এ নিয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর–দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনে এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক–দোয়ারাবাজার) আসনে মুহিবুর রহমান মানিক, সিলেট-১ (সদর–সিটি করপোরেশন) আসনে এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট-২ (বিশ্বনাথ–ওসমানীনগর) আসনে শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা–ফেঞ্চুগঞ্জ–বালাগঞ্জ) আসনে হাবিবুর রহমান হাবিব আবার মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ ছাড়া সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ–গোয়াইনঘাট–জৈন্তাপুর) আসনে ইমরান আহমদ, সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার–গোলাপগঞ্জ) আসনে নুরুল ইসলাম নাহিদ, মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা–জুড়ী) আসনে মো. শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল–কমলগঞ্জ) আসনে মো. আবদুস শহীদ, হবিগঞ্জ-৩ (সদর–লাখাই–শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে মো. আবু জাহির ও হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে মো. মাহবুব আলী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই বর্তমান সংসদ সদস্য।