রাসেলস ভাইপার ধরে আনলে পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিল ফরিদপুর আ.লীগ
প্রথমে ঘোষণা দেওয়া হয় ‘রাসেলস ভাইপার হত্যা করে নিয়ে এলে পুরস্কার’। পরে সংশোধন করা হয় ‘নিজেকে সুরক্ষিত রেখে জীবিত অবস্থায় রাসেলস ভাইপার সাপ ধরে বন বিভাগে জমা দেওয়া হলে ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার’। জেলা আওয়ামী লীগের দুটি ঘোষণাই ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। এ নিয়ে নানা সমালোচনার পর রাসেলস ভাইপারসম্পর্কিত সব ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিল জেলা আওয়ামী লীগ।
আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলাবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। দলীয় প্যাডে ওই সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ।
ঘোষণায় বলা হয়, ২০ জুন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার সাপসম্পর্কিত একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, যা প্রকৃতপক্ষে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। বিষয়টি বন ও পরিবেশ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগ সর্বসম্মতভাবে রাসেল ভাইপারসংক্রান্ত ঘোষণাটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
দলের কর্মীরা বলেন, ২০ জুন বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে প্রথমে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক। এ নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় ২১ জুন জেলা আওয়ামী লীগ ওই ঘোষণা থেকে কিছুটা সরে এসে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেখানে বলা হয়, নিজে সুরক্ষিত থেকে জীবিত রাসেলস ভাইপার ধরে বন বিভাগে জমা দিলে, তাঁকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের এই সংশোধিত ঘোষণাও ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী।
জেলা আওয়ামী লীগের এ ঘোষণার পর রাসেলস ভাইপার জীবিত ধরার জন্য তোড়জোর শুরু হয়ে যায় ফরিদপুর সদরের নানা গ্রামে। আজ ফরিদপুর বন বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ে তিনটি জীবিত রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা জমা দেন ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ও আলীয়াবাদ ইউনিয়নের তিন ব্যক্তি।
বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, বন্য প্রাণী জমা নেওয়ার নিয়ম নেই। তবে গত শুক্রবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফোন করে ধরা সাপ জমা রাখার নির্দেশ দিলে তিনি তা জমা রাখেন। যে তিনটি সাপ জমা পড়েছে, তা বাচ্চা। কোনোটিই এক থেকে দেড় ফুট দৈর্ঘ্যের বেশি নয়। পুরস্কারের আশায় ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদ ও অম্বিকাপুর ইউনিয়ন থেকে সাপ তিনটি ধরা হয়।
সাইদুর আরও বলেন, জীবিত সাপ জমা দেওয়া হয়েছে, এ মর্মে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক প্রত্যয়নপত্র চাওয়ায় যাঁরা সাপ জমা দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যয়নপত্র দিতে হয়েছে। সাপের বাচ্চাগুলো কাচের বয়ামে, প্লাস্টিকের পাত্রে কিংবা অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে করে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া আজ দুপুরে বলেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের ৬ (১) ধারা অনুযায়ী সরীসৃপজাতীয় প্রাণী ধরার কোনো বিধান নেই। আর তাঁদের প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দেওয়ারও বিধান নেই। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতির কথায় প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দিতে হয়েছে। এ তিনটি সাপ কোথায় অবমুক্ত করা হবে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।