বগুড়ায় ভেজাল সন্দেহে টিএসপি সারের চালান আটকে দেওয়া হয়েছে

বগুড়ায় বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের গুদামে আসা ২৩৮ মেট্রিক টন টিএসপি সারের চালান খালাস করা হয়নি
ছবি: প্রথম আলো

ভেজাল ও নকল সন্দেহে বগুড়ায় বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) গুদামে আসা ৪ হাজার ৭৬০ বস্তা বা ২৩৮ মেট্রিক টন ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সারের চালান খালাস করতে দেননি জেলা সার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক। গতকাল সোমবার দিনের বেলা ঘটনাটি ঘটলেও গতকাল রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত টিএসপি কমপ্লেক্স সার কারখানা থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত ১৭টি ট্রাকে এসব সার বগুড়া বাফার গুদামে খালাসের জন্য পাঠানো হয়। তবে নকল ও ভেজাল সারের চালান পাঠানো হয়েছে, এমন অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক এই সার গ্রহণ না করে গুণগত মান পরীক্ষার নির্দেশ দেন। সারের চালানের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য আজ মঙ্গলবার বিসিআইসির তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি বগুড়ায় এসেছে। তদন্ত কমিটিতে আছেন টিএসপি কমপ্লেক্সের উপপ্রধান রসায়নবিদ রেজাউল হক, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মাজহারুল ইসলাম ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আওয়াল হোসেন।

জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, বাফার গুদামে খালাসের জন্য আসা টিএসপি সার ভেজাল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে ওই চালান গ্রহণ না করতে বাফার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুণগত মান পরীক্ষার জন্য সারের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি বগুড়ায় এসেছেন। পরীক্ষার পর এই সার ভেজাল প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট পরিবহন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সারের গুণগত মান ঠিক থাকলে চালান গ্রহণ করার জন্য বাফার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বগুড়ার বাফার গুদাম ইনচার্জ মোহাম্মদ মোস্তাফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে প্রথম দফায় গত রোববার রাতে ৭টি ট্রাকে ৯৮ মেট্রিক টন বা ১ হাজার ৯৬০ বস্তা টিএসপি সারের চালান আসে। গতকাল দ্বিতীয় দফায় আরও ১০ ট্রাকে ১৪০ মেট্রিক টন বা ২ হাজার ৮০০ বস্তা টিএসপির চালান খালাসের জন্য আসে। ট্রাক থেকে সার খালাসের সময় তা ভেজাল সন্দেহ হয়। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এই চালান গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে গতকালই চট্টগ্রাম টিএসপি কমপ্লেক্স সার কারখানা কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানানো হয়েছে। এদিকে গতকাল তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ চন্দ্র সরকারের নেতৃত্বে প্রথম দফায় আসা সারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই নমুনা পরীক্ষার জন্য বাফার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আহসান হাবিবের মাধ্যমে আজ রাজশাহী মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে দুই দফায় ১৭টি ট্রাকে সারের চালান এসেছে
ছবি: প্রথম আলো

বিসিআইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিএসপি সারের এই চালান পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স এমএইচআরের ১৭টি ট্রাকে পাঠানো হয়। তবে খালাসের আগেই জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ আসে, ট্রাকে পাঠানো সারের চালান বগুড়ায় পৌঁছানোর আগেই পথে বস্তা পরিবর্তন করে ভেজাল সার ট্রাকে তোলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে একটি ট্রাকের চালক আবদুল আউয়াল বলেন, শনিবার টিএসপি কমপ্লেক্স সার কারখানা থেকে ট্রাকে সার লোড করেন তাঁরা। এরপর রোববার রাতে বগুড়া বাফার গুদামে পৌঁছান। কিন্তু ভেজাল সার সন্দেহে সারভর্তি ট্রাক আটকে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএইচআরের দায়িত্বশীল কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।