নেত্রকোনা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকসংকট কিছুতেই কাটছে না। কলেজে উচ্চমাধ্যমিকসহ, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সব মিলিয়ে সাড়ে ছয় হাজারের মতো শিক্ষার্থীকে ইংরেজি বিষয়ের ওপর ক্লাস করতে হয়। কিন্তু এই বিষয়ের ওপর শিক্ষক আছেন মাত্র দুজন। বিভাগটিতে আরও দুটি পদ আছে। পদগুলো এক থেকে সাত বছর ধরে শূন্য। এ কারণে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষার্থীর পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ইংরেজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকা প্রভাষক রানা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকসংকটে কী যে অসুবিধা, তা বলে শেষ হবে না। খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে। একাদশ-দ্বাদশে আড়াই হাজারের মতো স্টুডেন্টস, সব মিলিয়ে ছয় হাজারের বেশি ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষার্থীর জন্য বর্তমানে আমরা দুজন শিক্ষক। অন্য দুটি পদ এক থেকে সাত বছর ধরে শূন্য। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। বাইরে থেকে ভালো অতিথি শিক্ষকও পাওয়া যাচ্ছে না।’
শিক্ষকসংকটে কী যে অসুবিধা, তা বলে শেষ হবে না। খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি ১৯৮১ সালে জাতীয়করণ হয়। ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু হয়। পরে ইংরেজি, ইতিহাস, অর্থনীতি, রসায়ন, ব্যবস্থাপনাসহ ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স ও ১৩টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে কলেজে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। অনুমোদিত শিক্ষকের পদ ৬৯টি। এর মধ্যে পাঁচটি পদ শূন্য। শূন্য পদগুলো হলো ইংরেজিতে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যায় একজন সহকারী অধ্যাপক, ইতিহাসে একজন প্রভাষক ও গণিতে একজন প্রভাষক।
কলেজ সূত্রে আরও জানা গেছে, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালুর প্রায় দুই দশক হলেও প্রয়োজনীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী সম্মানের প্রতিটি বিভাগে সাতজন এবং স্নাতকোত্তরে ১২ জন করে শিক্ষক থাকার কথা। সে অনুযায়ী কলেজে ১৬৩টি পদে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ছাড়া আর কোনো বিভাগেই সম্মান কোর্সের জন্য সাতটি পদ সৃষ্টি করা হয়নি। আর স্নাতকোত্তর শ্রেণির কোনো বিভাগেই এখন পর্যন্ত ১২টি করে পদ সৃষ্টি সম্ভব হয়নি। বেশির ভাগ বিভাগেই চারটি করে শিক্ষকের পদ রয়েছে। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রধান—এই চার পদ শুধু অধ্যাপকের।
সম্প্রতি অনেক শিক্ষকের পদায়ন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই প্রতিকার মিলবে।
বর্তমানে কলেজে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষককের সংকট। এই কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, বিএ (পাস) ও স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষে সবার জন্য ইংরেজি বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্সের ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করছেন চার শতাধিক শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে ৬ হাজার ৫৩৬ শিক্ষার্থীকে ইংরেজি পড়তে হয়। অথচ তাঁদের জন্য মাত্র দুজন শিক্ষক আছেন।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফসান আহমেদ জানায়, ইংরেজিতে শিক্ষকসংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার একজন ছাত্রী বলে, ‘ইংরেজি ক্লাস নিয়মিত না হওয়ায় আমাদের বাইরে প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইংরেজি সম্মান চূড়ান্ত বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক না থাকার কারণে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। তবে যে দুজন স্যার আছেন, তাঁরা খুবই আন্তরিক।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. নূরুল বাসেত প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকসংকট নিয়ে প্রতি মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) লিখিতভাবে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। ফেব্রুয়ারিতেও ইংরেজি বিষয়ে শূন্য পদে শিক্ষক পদায়নের জন্য প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। মাউশির পরিচালক ও মহাপরিচালকের সঙ্গে পদ সৃষ্টি ও শূন্য পদের কথা বলা হয়েছে। সম্প্রতি অনেক শিক্ষকের পদায়ন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই প্রতিকার মিলবে।
এ বিষয়ে জানতে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।