২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

নরসিংদীতে বিএনপির কার্যালয়ে ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের হামলা

ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও বহিষ্কৃত এক নেতার কর্মী-সমর্থকদের হামলায় নরসিংদী জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের বিভিন্ন স্থানের কাচ ভেঙে যায়
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদী জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসভবনে আবার ভাঙচুর করে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও বহিষ্কৃত একটি পক্ষ। আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে সদর উপজেলার চিনিশপুরে এ ঘটনা ঘটে। ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও পরবর্তী সময়ে বহিষ্কৃত নেতা মাইন উদ্দিন ভূঁইয়ার কর্মী-সমর্থক।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা নিজেদের পদবঞ্চিত দাবি করে আন্দোলনের নামে চার মাস ধরে যা করছেন, এটা রাজনীতি নয়, অপরাধ। তাঁদের বহিষ্কারের মাধ্যমে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নিয়েছে কেন্দ্র। অতএব, তাঁরা এখন ছাত্রদলের কেউ না। এসব করে তাঁরা পার পেয়ে যাবেন, এমন না। আমরা রাজপথেই তাঁদের মোকাবিলা করব।’

গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলছেন। এসব কারণে ১২ ফেব্রুয়ারি মাইন উদ্দিনসহ তিন ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি বাতিল হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান পদবঞ্চিত ও বহিষ্কৃত একজন
ছবি: সংগৃহীত

জেলা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জানান, আজ দুপুরে জেলা বিএনপির অস্থায়ী এই কার্যালয়ে খায়রুল কবির খোকনসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা এক ঘরোয়া সভায় মিলিত হবেন—এমন খবরে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা কার্যালয়টির প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় বর্তমান কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে নানা ধরনের স্লোগান দেন তাঁরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল থেকে খায়রুল কবির খোকনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। একপর্যায়ে তাঁরা জানতে পারেন, কার্যালয়ের ভেতরে কেউ নেই। এরপরই তাঁরা ফটকের বাইরে থেকে কার্যালয়ের ভেতরে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এতে দোতলা ভবনটির বিভিন্ন স্থানের কাচ ভেঙে যায়। এরপর বিভিন্ন ব্যানার ছিঁড়ে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে চলে যান তাঁরা।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার রাতেই পদবঞ্চিত নেতাদের ২০-২৫ জন সমর্থক জেলা বিএনপি কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেন এবং ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়টির জানালার কাচ ভাঙচুর করেন। ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানেই খায়রুল কবির খোকনের কুশপুত্তলিকা পোড়ান তাঁরা। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফা কমিটি বাতিলের দাবিতে তাঁরা বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে খায়রুল কবির খোকনের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটে। গত ৫ এপ্রিল কার্যালয়টিতে হামলা চালিয়ে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও ইট-পাটকেল ছোড়েন তাঁরা। আজ আবারও ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়টির কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে।

হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃত মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার মাস ধরে আমরা ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। আজও দলীয় কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে খায়রুল কবির খোকন মিটিং করবেন শুনে আমার অর্ধশতাধিক কর্মী-সমর্থক সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। নেতাদের কেউ সেখানে না থাকায় আমার কর্মী-সমর্থকেরা ওই কার্যালয়ে ইটপাটকেল ছুড়েছে। আমরা এই কমিটি বাতিল চাই। যত দিন পর্যন্ত এই কমিটি বাতিল না হবে, তত দিন আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। তত দিন পর্যন্ত আমরা খায়রুল কবির খোকনকে নরসিংদীতে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেব না।’

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, এই ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদলের প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে নামধারী কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী বারবার এসব অপকর্ম করেই যাচ্ছে। বহিষ্কৃত হওয়ার পরও দলের নাম ভাঙিয়ে তারা সরকারি দল ও পুলিশ প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় বারবার দলীয় কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর চালাচ্ছে। এসব ঘটনায় আমরা লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাঁরা আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলে কী আসে-যায়?’