বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠা শিক্ষকের শাস্তি দাবি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এক শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ। শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড়েছবি: প্রথম আলো

যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) এক অধ্যাপকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ভেটেরিনারি অনুষদে অধ্যয়নরত মালয়েশীয় এক ছাত্রীর করা যৌন নিপীড়নের বিষয়টি সামনে এলে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল জব্বার মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির ঘটনা নতুন নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ভয়ে মুখ খোলেন না। এসব ঘটনার তদন্ত ও বিচারের ক্ষেত্রে প্রশাসনের উদাসীনতা বারবার পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ঘটনাতেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এ কারণেই শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়েছেন। এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে অধ্যয়নরত নেপালী শিক্ষার্থী সুস্মিতা শর্মা বলেন, ‘আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ আমাদের অভিভাবকের মতো। তাঁরা আমাদের সব নিরাপত্তা দেবেন। সেখানে একজন বিদেশি শিক্ষার্থীকে এভাবে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। আমরা চাই, ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্যায় হয়ে থাকলে তার যথাযথ বিচার করা হোক।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদে অধ্যয়নরত নেপালী শিক্ষার্থী বিক্রম ধোযী বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। এ ঘটনার যথাযথ বিচার না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সেটি কিছুতেই মেনে নেবে না।’

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, দেশে জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের পর এ ধরনের ঘটনা কিছুতেই কাম্য নয়। এ ধরনের ঘটনার বিচার নিশ্চিত করে এর পুনরাবৃত্তি রোধে অবিলম্বে নারী নিপীড়নবিরোধী সেল গঠনের জোর দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে মুঠোফোনে আজ শনিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দেওয়ার পর গতকাল (শুক্রবার) তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেন এবং বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। এ সময় ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বাংলাদেশে অবস্থিত মালয়েশীয় হাইকমিশনের সঙ্গেও যৌন নিপীড়নের বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন এবং প্রতিকার চেয়েছেন। পাশাপাশি ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানায়ও তিনি একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে পাঠানো অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, মালয়েশিয়ান ওই নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন। ওই শিক্ষক ও শিক্ষার্থী একই ভবনে থাকতেন। প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীর বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশ করে তাঁকে একাধিকবার যৌন হয়রানি করেছেন। মুঠোফোনে আপত্তিকর খুদে বার্তাও পাঠাতেন। অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে থানায় এসেছিলেন। পরে ওই শিক্ষার্থী তাঁর অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং বৈধ উপায়ে মালয়েশিয়া হাইকমিশনারের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানান। কোতোয়ালি থানায় তিনি কোনো মামলা করেননি।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে বলে জানান তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কের পরিচালক অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত বুধবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ পাওয়ার পরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রাথমিক তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে এবং খুব দ্রুতই সুপারিশ আসবে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক দোষী প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া এ বিষয়ে বলেন, ‘ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’