বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় চারটি মামলা, বিএনপির ২১১ নেতা-কর্মী আসামি, গ্রেপ্তার ৫
বগুড়ায় এক দফা দাবিতে পদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক চারটি মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদারসহ দলটির ২১১ নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার পর বগুড়া সদর থানায় তিনটি ও দুপচাঁচিয়া থানায় একটি মামলা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আলী আজগর তালুকদারকে তাঁর বগুড়া শহরের সূত্রাপুরের বাসা থেকে এবং রাত সাড়ে তিনটার দিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাজেদুর রহমানকে তাঁর পুরান বগুড়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া দুপচাঁচিয়া থানায় করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. আবু বক্কর, মো. তামিম ও মো. রাজু।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর ও ককটেল হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ বিভিন্ন ধারায় চারটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে।
বগুড়া সদর থানা-পুলিশ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার এক দফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদারের নেতৃত্ব শহরের বনানী থেকে শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পদযাত্রাটি ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মোড়ে পৌঁছালে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদের নেতৃত্বে ব্যারিকেড দিয়ে জলেশ্বরীতলা কালীমন্দির হয়ে দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে বলা হয়। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সাতমাথার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে ১০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ২০টি রাবার বুলেট ছোড়ে। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলায় নারুলি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক তরিকুল ইসলামসহ আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় বগুড়া বনানী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন মামলা করেন। এ মামলায় বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদারকে প্রধান আসামি করে ৪৯ জনকে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে অনেককে।
পুলিশের ভাষ্য, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায়ও পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতা আলী আজগর তালুকদারকে প্রধান আসামি করে ২৬ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে অনেককে।
বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। এ মামলায় সরকারি স্থাপনায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়। গতকাল বেলা ২টা ৪০ মিনিটে শহরের নবাববাড়ি সড়কে পুলিশের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগ এনে পৃথক মামলা করা হয়েছে। বগুড়া সদর থানা-পুলিশের উপপরিদর্শক আবদুল মালেক বাদী হয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিমকে প্রধান আসামি করে ১১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের চারটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ২০টি রাবার বুলেট নিক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।
দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বগুড়া শহরে বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে দূরপাল্লার বাস ভাঙচুরের অভিযোগে আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবদুল মুহিত তালুকদারসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের চালক মো. ফেরদৌস। মামলায় দুপচাঁচিয়ার সাহারপুকুর বাজার এলাকায় বেলা পৌনে তিনটার দিকে বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে শাহ ফতেহ আলী পরিবহনসহ দুটি গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তাঁদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও গুলি চালিয়েছে। এতে তাঁদের ২০০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৭০ নেতা-কর্মী। এক দফা দাবি বানচাল করতে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে মাঠছাড়া করতেই নেতা-কর্মীদের ওপর এভাবে হামলা ও মামলা করা হচ্ছে।