বৈরী আবহাওয়ার কারণে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূল কয়েক দিন ধরে উত্তাল। থেমে থেমে হচ্ছে ভারী বৃষ্টিও। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ ধরতে ট্রলার নিয়ে সাগরে নামছেন জেলেরা।
জেলেরা জানান, ইলিশ ধরতে হলে আগে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে (পশ্চিমে) গভীর বঙ্গোপসাগরে যেতে হতো, এখন ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটারে গেলেই ইলিশসহ বিপুল সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যেতে পারে। কারণ, টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ আহরণ বন্ধ ছিল, তখন মাছের প্রজননসহ দূরের মাছ উপকূলের কাছাকাছি আসে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে মাছ আহরণের ওপর জারি করা ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। কিন্তু বৈরী পরিবেশে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় জেলেরা এই কয়েক দিন সাগরে নামতে পারেননি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, উত্তাল সাগরের জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। দুপুরে শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সাগরে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে কয়েক শ ট্রলার। জ্বালানি, খাদ্যসামগ্রী, বরফবোঝাই করে কয়েকটি ট্রলারকে এ সময় সাগরের দিকে ছুটতে দেখা যায়। একটি ট্রলার সাগরে নামলে পাঁচ থেকে সাত দিন অবস্থান করে মাছ আহরণ করে। তারপর আহরিত সেই মাছ ঘাটে এনে চলে বিক্রি।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ২৩ জুলাই মধ্যরাতে ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও বৈরী পরিবেশের কারণে এত দিন জেলেরা সাগরে নামতে পারেননি। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি কমতে শুরু করেছে, আবহাওয়া পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে কিছু কিছু ট্রলার সাগরে যাচ্ছে মাছ ধরতে। ট্রলারের জেলেরা আর্থিক সংকটে আছেন, উপকূলের কাছাকাছি থেকে মাছ ধরে সে সংকট দূর করার চেষ্টা চলছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট–বড় ৬ হাজার ট্রলারে জেলে শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার।
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় নিবন্ধিত জেলেদের ৬৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, বৈরী পরিবেশে সাগর উত্তাল থাকায় প্রস্তুতি থাকার পরও কয়েক হাজার ট্রলার সাগরে নামতে পারছে না। বড় ট্রলারের কিছু কিছু এখন সাগরে নামছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে ছোট ট্রলারের জেলেদের সাগরে নামতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
জাল ফেললে ধরা পড়বে ইলিশ
দুপুরে নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটে একটি ট্রলারে বরফবোঝাই করছিলেন জেলেরা। ট্রলারে জেলের সংখ্যা ২১। তাঁদের একজন কাদির হোসেন (৫৫) বলেন, এখন সাগরে জাল ফেললেই ধরা পড়বে বড় বড় ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ গুইজ্যা, রুপচাঁদা, কোরাল, মাইট্যা, চাপাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর ঘাট, কস্তুরাঘাট, মাঝির ঘাটেও কয়েক শ ট্রলার সাগরে নামার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। তবে ৮০ শতাংশ ট্রলারের জেলেরা এমন পরিস্থিতিতে সাগরে নামাকে নিরাপদ মনে করছেন না।
ঝুঁকি নিয়ে সাগরে নামতে জেলেদের নিষেধ করা হচ্ছে জানিয়ে কক্সবাজার বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর কয়েক দিন ধরে উত্তাল রয়েছে। যে কারণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষেও জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। প্রশাসন থেকেও সতর্ক করা হয়েছে। তারপরও কিছু কিছু ট্রলারে জেলেরা ঝুঁকি নিয়ে সাগরে নামছেন। কারণ, তাঁরা চরম অর্থসংকটে রয়েছেন।
মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ জেলায় নিবন্ধিত মাছ ধরার যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে ৫ হাজার ৫৪৯টি এবং অযান্ত্রিক নৌকা ১ হাজার ২৩৫টি। অযান্ত্রিক নৌকার ৮০ শতাংশ টেকনাফে সমুদ্র উপকূলের ১ কিলোমিটার কাছাকাছি গিয়ে জাল ফেলে মাছ ধরে। কিন্তু বৈরী পরিবেশে সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফের জেলেরাও সাগরে নামতে পারছেন না। নৌকাগুলো ২৩ জুলাই থেকে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের পাশে নোঙর করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় এসব নৌকাকে বলা হয় ডিঙি নৌকা।
টেকনাফ ডিঙি নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি সুলতান আহমদ বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ডিঙি নৌকার অন্তত ৮ হাজার জেলে সরকারি সহায়তার চাল পাননি। খেয়ে না–খেয়ে চলেছে তাঁদের সংসার। এখন বৈরী পরিবেশের কারণে হাজারো জেলে সাগরে নামতে পারছেন না। সাগর কখন শান্ত হবে, সে প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন তাঁরা।