সীমান্তে হিন্দু-মুসলমান নয়, বাংলাদেশি হিসেবেই গুলি করে হত্যা করা হয়: রুহুল কবির
বিএনপির জ্যেষ্ঠ মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রক্তাক্ত করেছে বিএসএফ। সীমান্তে হিন্দু-মুসলমান নয়, বাংলাদেশি হিসেবেই গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়। ফেলানীর মতো সম্প্রতি কিশোরী স্বর্ণা রানী দাস ও ঠাকুরগাঁওয়ে এক কিশোরকে বিএসএফ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। ভারত যেন বাংলাদেশিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কালনীগড় বাজারে এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। সম্প্রতি বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী স্বর্ণা রানী দাস, যার বাড়ি উপজেলার কালনীগড় গ্রামে। আজ রোববার দুপুরে তার স্বজনদের খোঁজখবর নিতে যান রুহুল কবির। এ সময় কালনীগড় বাজারে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।
রুহুল কবির বলেন, এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনে হিন্দু-মুসলমান রয়েছেন। বিভিন্ন সময় দুই পক্ষে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়। অনেকে আহত হন। অথচ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আক্রান্ত হলে ভারতের সরকার বলে, এ দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, তাঁরা নিরাপত্তাহীন।
রুহুল কবির আরও বলেন, গত ১৬-১৭ বছরে সীমান্ত হত্যা নিয়ে শেখ হাসিনা নিশ্চুপ ছিলেন; কোনো প্রতিবাদ জানাননি। তিনি ছিলেন ভারতের প্রতি নতজানু। দেশ স্বাধীনের পর থেকে শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া সবাই সীমান্তের শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছে। তিনি দেশের অখণ্ডতা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব উঁচু করে রাখতে পারেননি। জোর করে ক্ষমতা দখল করে রাখতে চেয়েছিলেন। এ দেশের মানুষ তা ভুলবে না।
অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে রুহুল কবির বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর গঠিত ইউনূস সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয়, এখনো সেটা আছে। তবে সরকার যেন গা ছাড়া ভাব নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। সীমান্ত হত্যায় জোরালো আওয়াজ কেন হলো না? কেন সরকার নির্লিপ্ত থাকল? এ প্রশ্ন জনগণের মুখে মুখে। এ বিষয়ে অন্তবর্তী সরকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশে রুহুল কবির বলেন, নির্বাচন দিতে বিলম্ব হচ্ছে কেন? জনগণের সন্দেহ হচ্ছে। গণতান্ত্রিক চর্চা প্রসারিত করে দ্রুত নির্বাচন দিন।
গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির বলেন, নির্বাচন কখন হবে, সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের প্রশ্ন করুন। নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের জন্য তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
আজ দুপুর ১২টার দিকে সভা শুরু হয়। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শরিফুল হকের সভাপতিত্বে ও বড়লেখা উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদিরের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমদ, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’–এর উপদেষ্টা আলমগীর কবীর, আহ্বায়ক আতিকুর রহমান প্রমুখ।
সভা শেষে রুহুল কবির রিজভী কিশোরী স্বর্ণা রানী দাসের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁদের আর্থিক সহযোগিতা করেন।
স্বর্ণা রানী দাস (১৪) কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা পরেন্দ্র দাস ও সঞ্জিতা রানী দাস দম্পতির মেয়ে। গত ১ সেপ্টেম্বর সে মায়ের সঙ্গে চোরাইপথে পার্শ্ববর্তী কুলাউড়া উপজেলার লালারচক সীমান্ত দিয়ে ভারতে আত্মীয়র বাড়িতে যাচ্ছিল। এ সময় বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় স্বর্ণা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার বুকে গুলি লাগে। সে জুড়ীর নিরোদ বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। পরে বিএসএফ তার লাশ নিয়ে যায়। ৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করে।