মানিকগঞ্জ–৩ আসন
জাপার প্রার্থী প্রচারণায় নেই, স্বস্তিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
জাপার প্রার্থী জহিরুল আলমের মনোযোগ মানিকগঞ্জ–১ আসনে। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরও সরব উপস্থিতি নেই। ফলে অনেকটাই নির্ভার আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ মালেক।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বৈত প্রার্থী হলেও মানিকগঞ্জ-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী জহিরুল আলমের (রুবেল) মনোযোগ নেই। বিষয়টি স্বস্তি হয়ে এসেছে ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নির্বাচনী লড়াইয়ে। দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, অবিশ্বাস্য কিছু না হলে টানা চতুর্থবারের মতো এই আসনে জাহিদ মালেক বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন।
আসনটিতে ভোটের সমীকরণ একপেশে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, নৌকার প্রার্থী জাহিদ মালেকের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্বাচনী লড়াই খুব একটা জমবে না। এর প্রভাব পড়তে পারে ভোটকেন্দ্রে। ভোটারদের কেন্দ্রে আনা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলার সহসভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীরও তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। এ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের তেমন কোনো সাড়াও নেই। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ-৩ (সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ পৌর ও সদরের সাতটি ইউনিয়ন) আসনে ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, গণফোরামের মফিজুল ইসলাম খান কামাল, জাতীয় পার্টির (জাপা) জহিরুল আলম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এ খালেক দেওয়ান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এম হাবিব উল্লাহ এবং তৃণমূল বিএনপির মোয়াজ্জেম হোসেন খান (মজলিশ)।
মানিকগঞ্জ–৩ ও ১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন জহিরুল আলম। তবে তাঁর পুরো মনোযোগ এখন মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয়) আসনে। এই আসনে আওয়ামী লীগ তাঁদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে জাপার জন্য ছেড়ে দিয়েছে। ফলে মানিকগঞ্জ–৩ আসন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই জহিরুল আলমের। তিনি বলেন, মানিকগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়ে জোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ কারণে তাঁর নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত এই আসনকে ঘিরেই। নির্বাচনের মাঠে অন্যান্য প্রার্থীরও তেমন জোরালো উপস্থিতি নেই।
তবে কোনো প্রার্থীকেই দুর্বল ভাবতে নারাজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গত শুক্রবার তিনি জেলা সদরের দিঘী ইউনিয়নে দুটি পথসভা ও একটি জনসভা করেন। এই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় জেলা ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাসহ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমি কোনো প্রার্থীকে ছোট করে দেখি না। প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য শুভকামনা রয়েছে। জনগণের সাড়া দেখে আমরা খুব ভালো ভোট পাব বলে মনে হচ্ছে। ভোট বেশি পাওয়ার কারণও আছে। নির্বাচনী এলাকাতে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। ভোটার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন।’
২০০৮ সালে মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাহিদ মালেক। এরপর ২০১৪ সালে একই আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালে নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এখন পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এবারও নির্বাচনীয় প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ মালেক এগিয়ে রয়েছেন।
এদিকে ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন মফিজুল ইসলাম খান। পরবর্তী সময়ে তিনি গণফোরামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি গণফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি। গতবারের (২০১৮ সাল) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-৩ আসনে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে নির্বাচন করেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, ওই নির্বাচনে মফিজুল ইসলাম খান ২৯ হাজার ৯০৪ ভোট পান। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক পান ২ লাখ ২০ হাজার ৫৯৫ ভোট।
কমবেশি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন উদীয়মান সূর্য প্রতীকের প্রার্থী মফিজুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘তিনি (জাহিদ মালেক) রাজনীতিবিদ নন, ব্যবসায়ী। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের যাওয়ার আগ্রহ কম। মানুষ (ভোটার) ত্যক্তবিরক্ত হয়ে এবার তাঁদের (আওয়ামী লীগের প্রার্থী) ভোট দেবে না।’