পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে ‘ওয়ান–স্টপ সার্ভিস’ চান কক্সবাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকেরা
কক্সবাজারে পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে ‘ওয়ান–স্টপ সার্ভিস’ চেয়েছেন হোটেল ও রেস্তোরাঁর মালিকেরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সৈকতের একটি তারকা হোটেলে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানিয়েছে কক্সবাজার হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতি ও কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রিসোর্ট মালিক সমিতি।
সমিতির নেতারা বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ পর্যটন খাতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ২ লাখ উদ্যোক্তা বিপাকে পড়েছেন। যাঁরা পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে লাইসেন্স পেতে এবং যাঁরা লাইসেন্স পেয়েছেন, তাঁদের লাইসেন্স নবায়ন করতে বহু দপ্তরে ধরনা দিতে হচ্ছে। এতে তাঁরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে তাঁরা ‘ওয়ান–স্টপ সার্ভিস’ চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কখনো সুয়ারেজ প্রকল্প, কখনো ময়লা-আবর্জনার কথা বলে হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকদের হয়রানি করা হয় অভিযোগ করে কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নাইমুল হক চৌধুরী বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকেরা এ জন্য কোনোভাবে দায়ী নন, মালিকেরা সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে যথাযথ অনুমোদন নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করেন।
সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা, ১২০ কিলোমিটার সৈকতের মধ্যে অরক্ষিত ১১৬ কিলোমিটারে আরও অন্তত ১০টি পর্যটন স্পট সৃষ্টি ও পর্যটক হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারের শুল্ক বিভাগের সঙ্গে হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকেরা মিলেমিশে হাজার কোটি টাকা লোপাটের মতো ভিত্তিহীন সংবাদ পর্যটনশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের খবর বিনিয়োগকারীদের হতাশায় ফেলে দিচ্ছে। যদিও হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকেরা সরকারকে নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধ করেন। দুর্নীতি করলে শুল্ক বিভাগ করতে পারে।
‘দুর্নীতির সঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকদের জড়ানো ঠিক হয়নি’ উল্লেখ করে আবুল কাশেম সিকদার বলেন, শুধু আবাসিক হোটেল থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫ কোটি ৮০ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ ও চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করা হয়েছে। একইভাবে রেস্তোরাঁগুলো থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার রাজস্ব পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সেই তুলনায় পর্যটকদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে না।
হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী বলেন, তিনটি হোটেল মালিক সমিতির আওতায় ১২৬টির মতো হোটেল গেস্টহাউস আছে। রেস্তোরাঁ আছে ১২৬টি। এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সমিতির বাইরে আরও দেড় শতাধিক হোটেল-গেস্টহাউস ও পাঁচ শতাধিক রেস্তোরাঁ আছে। সেখান থেকে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে না। এসব হোটেল-রেস্তোরাঁর অধিকাংশেরই বৈধ লাইসেন্স নেই। তাঁরা পর্যটকদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া ও খাবারের দাম আদায় করেন। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। উল্টো বৈধ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে।
শাহ আলম চৌধুরী আরও বলেন, পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের উন্নয়নে রেললাইন সম্প্রসারণ, কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন, মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দরসহ ১২টির বেশি উন্নয়ন প্রকল্প দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর জন্য লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে যখন উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, তখন বিশেষ একটি মহল পর্যটনশিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প নানা সংকটের মুখে। বর্তমানে শহরের হোটেল-গেস্টহাউসগুলোর ৯৫ শতাংশ কক্ষ খালি পড়ে আছে। পর্যটকেরা কক্সবাজারবিমুখ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এ শিল্পে বিনিয়োগকারী দুই লাখ মানুষ।
মেরিন ড্রাইভ রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, সীমাহীন সম্ভাবনার কক্সবাজারের পর্যটন খাতকে বিশ্বের মানদণ্ডে পৌঁছানোর জন্য ওয়ান–স্টপ সার্ভিস দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে বিনিয়োগকারীরা।