টাঙ্গাইল
চরাঞ্চলজুড়ে ভুট্টা আর ভুট্টা
চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষক রবি মৌসুমে কয়েক বছর ধরে আগাম জাতের হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
টাঙ্গাইলে চলতি মৌসুমে ভুট্টার আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে। জেলার ১২ উপজেলায় বিশেষ করে চরাঞ্চলজুড়ে শোভা পাচ্ছে ভুট্টা। ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় কৃষকেরা খুশিতে জমিতে কাজ করছেন।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার নদীবেষ্টিত বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষক রবি মৌসুমে কয়েক বছর ধরে আগাম জাতের হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চরাঞ্চলে অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ বেশি হয়। কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গমের পাশাপাশি ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুট্টা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া পোলট্রিশিল্পের জন্য ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক বিঘা জমিতে ভুট্টা হয় ৪০–৪৫ মণ। প্রতি বিঘায় ৮–১০ হাজার টাকা খরচ করে চাষিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারেন। চলতি রবি মৌসুমে জমিতে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তাঁরা এখন ব্যস্ত জমি পরিচর্যায়। অনেক কৃষক ভুট্টার জমিতে সাথি ফসল হিসেবে শীতকালীন শাকসবজির আবাদ করেছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৭৬ হেক্টর বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৬ হাজার ৭৫০ কৃষককে ১৩ হাজার ৫০০ কেজি ভুট্টার বীজ দেওয়া হয়েছে বিনা মূল্যে। এ ছাড়া ২০ কেজি করে ডিএপি এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হয় বিনা মূল্যে। গত বছর বাজারে ভুট্টার দাম বেশি থাকায় অধিক লাভবান হন কৃষকেরা। এতে প্রণোদনা কর্মসূচির বাইরেও অনেক কৃষক তাঁদের জমিতে এ মৌসুমে ভুট্টার আবাদ করেছেন।
ভূঞাপুরের যমুনা চরাঞ্চলের কুঠিবয়রা গ্রামের ভুট্টাচাষি শাহজাহান মিয়া জানান, এ বছর বন্যায় সব ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তাঁরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যা–পরবর্তী সময়ে যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরে তাঁরা ভুট্টা চাষ করেছেন। ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম ও লাভ বেশি।
ভুট্টাচাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। আশা করছেন, প্রতি বিঘায় ৩৫–৪০ মণ ফলন পাবেন।
দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের আগ দেউলী গ্রামের কৃষক সোহেল রানা বলেন, ‘এবারই প্রথম আমি ভুট্টার আবাদ করেছি। আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় ভুট্টার প্রচুর আবাদ হয়। ভুট্টার ফলন অনেক বেশি এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। আমি ৪০ শতক জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। আশা করছি, ভালো ফলন পাব।’
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর বেশি জমিতে ভুটার আবাদ হয়েছে। তারা সব সময় ভুট্টার রোগ, পোকামাকড় দমন ও অধিক ফলনের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।