বিপৎসীমার নিচে মনু-ধলাই নদের পানি, তবু হাওরে পানি কমছে না

মনু নদের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের কাছে সৈয়ারপুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোত কমে আসায় মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদের পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। মনু নদের দুটি পয়েন্টেই পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাকালুকি হাওরের পানি কমছে না।

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কয়েক দিন ধরে মনু, ধলাই, কুশিয়ারাসহ জেলার নদ-নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে নদ-নদীতীরবর্তী গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর বৃষ্টি ও ঢলের পানি কিছুটা কমায় হাকালুকি হাওরের পানি কমেছিল। কিন্তু গত তিন-চার দিনের ভারী বর্ষণ ও ঢলে আবার আগের উচ্চতায় ফিরে এসে। পানি বাড়ায় হাকালুকি হাওরপারের মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে উজানের ঢলের স্রোত কমে যাওয়ায় মনু ও ধলাই নদের পানি কমতে শুরু করে। নদ দুটির পানির প্রায় পুরোটাই উজান থেকে আসে। উজানের ঢল বাড়লে দুটি নদের পানি বেড়ে যায়। এক-দুই ঘণ্টার ব্যবধানে পানি বিপৎসীমার ওপরে চলে যায়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নদ-নদীর পানির তথ্যে পাউবো জানায়, মনু নদের রেলওয়ে সেতুর কাছে বিপৎসীমার ২৪০ সেন্টিমিটার ও মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাটে ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদ বিপৎসীমার ২৭৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ও জুড়ী নদীর ভবানীপুরে ১৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের পানি কমছে না। চার-পাঁচ দিন আগে পানি কিছুটা কমেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরে নতুন করে পানি বেড়েছে। ফলে হাকালুকি হাওরপারের মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলেন, তাঁরা সহসা বাড়িঘরে ফিরতে পারছেন না।

জেলার বড়লেখা উপজেলার হাকালুকিপারের সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাকালুকি হাওরে চার দিন ধরে পানি বাড়ছে। যেটুকু পানি কমেছিল, সেই পানি আগের অবস্থায় চলে আসছে। পানি আগের চেয়ে এক-দেড় ইঞ্চি নিচে আছে। আজকেও পানি বেড়েছে। সুজানগর ইউনিয়নের শতভাগ মানুষ পানিবন্দী। সব কটা রাস্তা পানির নিচে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।’

পাউবোর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর নতুন করে উজানের পাহাড়ি ঢল আসেনি। এ জন্য মনু ও ধলাই নদের পানি কমেছে। দুটি নদের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কুশিয়ারায় পানি না কমলে হাকালুকি হাওরের পানি কমবে না।’ তিনি বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকলেও ৬ ও ৭ জুলাই আসামে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এতে কুশিয়ারা নদীতে আরও পানি বাড়বে।