নারায়ণগঞ্জের হাটের ঐতিহ্য এক থেকে দেড় কেজির ‘পুতা মিষ্টি’
দেখতে চমচমের মতো; তবে আকারে বড়। একেকটির ওজন এক থেকে দেড় কেজি। সেই মিষ্টির স্বাদ নিতে দূরদূরান্ত থেকে মিষ্টিপ্রেমীরা আসেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাইক্কারটেক হাটে। প্রতি রোববার কাইক্কারটেক হাট বসে। হাটে এসে অনেকে এই মিষ্টি খান, অনেকে আবার বাড়ির জন্য নিয়ে যান।
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কাইক্কারটেক হাটটি অন্তত ২০০ বছরের পুরোনো। সাপ্তাহিক এই হাট পুতা মিষ্টি, কাঠের তৈরি নৌকা ও গরু-ছাগল বেচাকেনার জন্য প্রসিদ্ধ। তবে এই হাটে এখন আর আগের মতো গরু-ছাগল বেচাকেনা হয় না। পুতা মিষ্টি ও নৌকার পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে হাটটি। হাটের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেনাবেচা হয়।
প্রতি কেজি পুতা মিষ্টি বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। ছোট আকারের পুতা মিষ্টিও আছে। একেকটি ছোট পুতা মিষ্টির দাম ৫০ টাকা। এ ছাড়া বড় রসগোল্লা প্রতিটি ৫০ টাকা, ছোট রসগোল্লা প্রতি কেজি ২০০ টাকা, কালো জাম প্রতি কেজি ২০০ টাকা, বালুশাই প্রতি কেজি ২০০ টাকা ও দই প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।
হাটের দিন মিষ্টি বিক্রি করেন ৭০ বছর বয়সী দিলীপ ঘোষ। এমনিতে স্থানীয় আনন্দবাজারে তাঁর একটি মিষ্টির দোকান আছে। তাঁর বাবা মৃত নারায়ণ চন্দ্র ঘোষও মিষ্টি ব্যবসায়ী ছিলেন। দিলীপ এই হাটের প্রবীণ বিক্রেতা। তিনি বলেন, আগে তাঁরা মাটির হাঁড়িতে পুতা মিষ্টি বিক্রি করতেন। সে সময় এক কেজি ওজনের পুতা মিষ্টি বিক্রি করতেন ৪০ টাকায়। এখন এক কেজির পুতা মিষ্টি বিক্রি করেন ২০০ টাকায়।
পুতা মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে দিলীপ ঘোষ বলেন, দুধ থেকে প্রথমে ছানা বানানো হয়। সেই ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ঘন চিনির শিরায় জাল দিয়ে পুতা মিষ্টি তৈরি করা হয়।
হাটে আসা হোসেনপুর এলাকার ব্যবসায়ী রোমান হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাইক্কারটেক হাট পুতা মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। এই মিষ্টি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। বহু জায়গায় মিষ্টি খাই, তবে পুতা মিষ্টির স্বাদ অন্য রকম লাগে।’
এই হাটের আরেক মিষ্টি বিক্রেতা চন্দন ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, পুতা মিষ্টির বয়স ১০০ বছরেরও বেশি। প্রতি রোববার কাইক্কারটেক হাট, বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল হাট, শনি ও বুধবার আনন্দবাজার হাটে তাঁরা পুতা মিষ্টি বিক্রি করেন। কেউ অর্ডার দিলে আড়াই কেজি ওজনের পুতা মিষ্টিও বানিয়ে দেন। দুধ, চিনিসহ সবকিছুর দাম বাড়লেও আগের দামেই মিষ্টি বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণে লাভ কিছুটা কম হচ্ছে।
হাটের পাশের হাসান ইলেকট্রনিকস নামের একটি দোকানের মালিক হাসান আলী (৪৮)। তিনি বলেন, ‘বাপ-দাদার কাছ থেকে এই হাটের পুতা মিষ্টির অনেক গল্প শুনে আসছি। নিজেই তো ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে পুতা মিষ্টি খাই।’