জামালপুরে ‘ডিবি পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে’ গরু চুরি মামলার আসামির মৃত্যু

মরদেহ
প্রতীকী ছবি

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের বাজিতেরপাড়া এলাকার সড়কের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল দেখে ওই ব্যক্তি পালাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি মাটিতে পড়ে মারা গেছেন। পুলিশের দাবি নিহত ব্যক্তি গরুচোর চক্রের সঙ্গে জড়িত। ঘটনার সময় গরুচোর চক্রের আরেক সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আরেকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

নিহত মো. শাহিন (৪৫) জামালপুর শহরের জঙ্গলপাড়া বোর্ডঘর এলাকার মৃত জাহেদ আলীর ছেলে। তিনি পিকআপ ভ্যানের চালক ছিলেন। তবে বিভিন্ন থানায় তাঁর নামে হত্যা ও গরু চুরিসহ ১১টি মামলা রয়েছে। আটক ব্যক্তির নাম মো. জলিল মিয়া। তিনি জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের রনারামপুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁর নামেও বিভিন্ন থানায় হত্যা ও গরু চুরিসহ প্রায় ১৫টি মামলা রয়েছে। পালিয়ে যাওয়া চোর চক্রের আরেক সদস্যের নাম মো. মনসুর। তাঁর বাড়ি সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের রনারামপুর এলাকায়। তাঁর নামে বিভিন্ন থানায় গরু চুরির একাধিক মামলা রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে স্থানীয় লোকজন বাজিতেরপাড়া এলাকার সড়কের পাশে শাহিনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

জামালপুর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদারভিটা এলাকায় আমাদের একটি দল অন্য একটি কাজে গিয়েছিল। তখন ওই এলাকার একটি কালভার্টের কাছে একটি পিকআপ ভ্যান দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তখন ভ্যানটি থামানো হয়। ভ্যানে তিনজন ছিলেন। তখন জলিল নামের একজনকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। এ সময় ভ্যানে থাকা অন্য দুজন প্রায় আমাদের ওপর ভ্যানটি উঠিয়ে দিয়ে গাড়ি টান দিয়ে চলে যান। পরে আমরা ভ্যানটি খুঁজতে খুঁজতে একটি বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখি। ঘটনা এটুকুই।’

জামালপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মাদারগঞ্জ সার্কেল) মো. সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, নিহত ব্যক্তির নামে গরু চুরির ১১টি মামলা রয়েছে। গতকাল রাতে পিকআপ ভ্যান নিয়ে চক্রটি গরু চুরির জন্য বের হয়েছিল। তখন স্থানীয় লোকজনের ধাওয়ায় পিকআপ ভ্যান রেখে পালাতে গিয়ে মাটিতে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। নিহত ব্যক্তির মুখ থেঁতলে গেছে এবং এই কারণে নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। সাইদুর আরও বলেন, ঘটনার সময় স্থানীয় লোকজন গরু চোর চক্রের অন্য সদস্য জলিলকে আটক করে। পরে আটক ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলের কাছে থাকা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দলের কাছে দেয়। পরে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা আটককৃত ব্যক্তিকে শ্যামগঞ্জ কালীবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হস্তান্তর করা হয়।

নিহত শাহিনের স্ত্রী জরিনা বেগম মাদারগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আগে কই দিন পরপরই দারোগা-পুলিশ তাঁরে (শাহীন) ধইরে নিয়ে আইতো। পরে সব বাদ দিয়েছিল। মেলাদিন পুলিশ ধরে নাই। হঠাৎ কইরা ডিবি পুলিশ সন্দেহ করতেছিল। তখন ওরে কইলাম ঢাকা যাইয়্যা থাকো-গা। না হইলে তুমারে ডিবি ধইরে নিয়ে যাবো গা।’ কথাগুলো বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।