ময়মনসিংহে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় ‘পুলিশের ব্যত্যয়’ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু
ময়মনসিংহে ডিবি পুলিশের অভিযানের পর ফয়সাল খান ওরফে শুভ নামের এক তরুণকে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের কোনো ব্যত্যয় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে জেলা পুলিশ সুপার মো. আজিজুল ইসলাম তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেনকে। সদস্য করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এম এম মোহাইমেনুর রশিদ ও আদালত পরিদর্শক পি এস এম মোস্তাছিনুর রহমানকে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কোনো ব্যত্যয় আছে কি না, আমাদের ফোর্স কীভাবে কাজ করেছে, আইনের বিধির মধ্যে ছিল কি না, কতটুকু প্রফেশনালিজম মেইনটেইন (পেশাদারত্ব বজায় রাখা) করে কাজটি করেছে, পুরো ঘটনার বিষয়ে একটি পিকচার আউট করা হবে তদন্তের মাধ্যমে। আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
ফয়সাল খান ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা কাশিপুর এলাকার মো. সেলিম খানের ছেলে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে নগরের কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউস রোডে বড় বোনের বাসায় থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।
ঘটনা প্রসঙ্গে ফয়সালের স্বজনেরা জানান, চার বছর ধরে ফয়সালের সঙ্গে একই এলাকার এক তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি মেয়েটির সরকারি চাকরি হয়। এরপর অন্য আরেকজনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হলে ফয়সালের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। ফয়সাল বিয়েতে বাধা দিতে চাইলে তরুণীর বাবা ১০ নভেম্বর পর্নোগ্রাফি আইনে থানা ও ডিবি পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করেন। ওই দিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফয়সালের বোনের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। পরে বোনের বাসার সামনে ফয়সালকে অচেতন ও রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেদিন রাত ১২টা ৫ মিনিটে ফয়সাল, তাঁর তিন বোন ও চাচির বিরুদ্ধে থানায় মামলা নথিভুক্ত করে পুলিশ।
এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীদের দাবি, ওই অভিযানের সময় তরুণীর এক খালাতো ভাই ও অজ্ঞাতপরিচয় আরেক তরুণকে সঙ্গে নিয়ে যায় ডিবি। অভিযানে তাঁদের সঙ্গে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই অভিযান শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পর বাসার নিচ থেকে ফয়সালকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা সেলিম খান ১২ নভেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তরুণীর বাবাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু আজ বিকেল পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোহরাব উদ্দিনের কাছে মুঠোফোনে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। অভিযানে কতজন পুলিশ সদস্য ছিলেন, বাইরের দুজন লোক কেন ছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানে ছয়জনই ছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে আটজন দেখা গেছে—এ প্রশ্ন করতেই মুঠোফোনে নেটওয়ার্কের সমস্যা হচ্ছে বলে লাইন কেটে দেন। পরে পুনরায় ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।