পাথরঘাটায় যুবককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ, প্রতিবাদে স্থানীয়দের বিক্ষোভ
বরগুনার পাথরঘাটার জুয়েল মীর নামের এক কোস্টগার্ডের সোর্সের বিরুদ্ধে ইয়াবা দিয়ে এক যুবককে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পাথরঘাটা-হরিণঘাটা সড়কের বাদুরতলা সেতুতে এ ঘটনা ঘটে। তবে জুয়েল মীর তাদের সোর্স না বলে জানিয়েছে পাথরঘাটা কোস্টগার্ড স্টেশন।
ফাঁসিয়ে দেওয়া ওই যুবকের নাম মো. সুমন (২৫)। তিনি উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। ১০০টি ইয়াবাসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে সুমনের পরিবার অভিযোগ করে বলেন, জুয়েল মীর ইয়াবা দিয়ে সুমনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
মো. সুমনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় বাদুরতলা বাজারে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ করেছেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, কোস্টগার্ডের সোর্স ইয়াবা দিয়ে তাঁকে ফাঁসিয়েছে। জুয়েল মীর (২৮) পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের গহরপুর গ্রামের জাফর মীরের ছেলে।
এ ঘটনায় পাথরঘাটা কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট এম আকতার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মো. সুমনকে ১০০ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১৭ হাজার ৭৮২ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মো. সুমনের বিরুদ্ধে পাথরঘাটা থানায় মামলা করে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে পাথরঘাটা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে জুয়েল মীর নামে কোস্টগার্ডের কোনো সোর্স থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
অপর দিকে পাথরঘাটা কোস্টগার্ডের ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গ্রেপ্তার মো. সুমন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে জুয়েল মীরের বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জের ধরে জুয়েল মীর ইয়াবা দিয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছে।’
মো. সুমন বলেন, ‘কিছুদিন আগে থেকে জুয়েল মীর আমাকে হরিণের চামড়া ও মাদক দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আসছিল। এ ঘটনায় আমি এক মাস আগে পাথরঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।’
বাদুরতলা বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, জুয়েল মীরকে ২০২০ সালের ৭ মার্চ ১ কেজি গাঁজাসহ পাথরঘাটা কোস্টগার্ড গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে তাঁকে কোস্টগার্ডের সোর্স পরিচয়ে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে কাজ করতে দেখা যায়। ওই কাজের ধারাবাহিকতায় ইয়াবা দিয়ে মো. সুমনকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইয়াবা জব্দের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী গহরপুর গ্রামের খলিল ফরাজী ও বাদুরতলা গ্রামের ইউনুস হাওলাদার বলেন, ‘সুমন ট্রলারের ডিজেল আনতে বাড়ি থেকে পাথরঘাটা বাজারে রওনা হন। এ সময় বাদুরতলা সেতু অতিক্রমের সময় ওই সেতুর ওপরে সুমনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে জুয়েল মীর। এ সময় জুয়েল সুমনের সামনে গিয়ে সুমনের বুকপকেটে একটা কিছু গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করে। সঙ্গে সঙ্গে সাদাপোশাকে ও কোস্টগার্ড পোশাকে সদস্যরা জুয়েলকে ঘিরে ধরে তার পকেট থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে। এ সময় আমরা ঘটনাটি দেখছিলাম। তবে ওই ঘটনা দেখে মানুষজন জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে কোস্টগার্ড সদস্যরা সুমনকে নিয়ে কোস্টগার্ড অফিসে চলে যান। এ সময় সুমনকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় তাৎক্ষণিক বাদুরতলা বাজারে কোস্টগার্ড সোর্স জুয়েল মীরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন স্থানীয় গ্রামবাসী।’
বাদুরতলা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জুয়েল মীর মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ওই সময় যুবলীগের রাজনীতি করতেও দেখা গেছে তাঁকে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাদুরতলা বাজারে যুবদলের ব্যানার ফেস্টুন দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে এখনো তিনি কোস্টগার্ড সোর্স পরিচয় এলাকায় কাজ করেন, যা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা থানার ওসি (তদন্ত) ইয়াকুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, কোস্টগার্ড মাদক মামলা দিয়ে সুমনকে পাথরঘাটা থানায় হস্তান্তর করেছে। যদি কোনো ফাঁসানোর অভিযোগ থাকে, তাহলে মামলার তদন্তের সময় পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখবে।