দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উন্নয়ন অভিযাত্রায় সিলেট সমভাবে এগোতে পারছে না। অথচ প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, সিলিকা বালু, পাথর, বালুসহ নানা ক্ষেত্রে এই অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সিলেটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিও লাভবান হবে।
সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকার একটি রেস্তোরাঁ মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাক্–বাজেট আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে বিকেলে সভা শুরু হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে এ সভা চলে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী (নাদেল)। শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও আয়োজক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজার সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান (হাবিব) ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। কিন্তু এই উন্নয়ন অভিযাত্রায় সিলেট হয়তো সমানতালে এগোতে পারছে না। অথচ সিলেটের প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা, চুনাপাথর, সিলিকা বালু, পাথরের পাশাপাশি হাওরে উৎপাদিত মাছ ও ধান, চা-শিল্প এবং প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। সিলেটের এই আকাশচুম্বী সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে সিলেট অঞ্চল তার সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারে।
সিলেটের ৮৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী গ্রামে বসবাস করেন জানিয়ে সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান তাঁর বক্তৃতায় বলেন, গ্রামের এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে ভাবতে হবে। এদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করেই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। প্রবাসী উদ্যোক্তা গ্রুপগুলোকে সংশ্লিষ্ট করে জনকল্যাণমূলক যৌথ প্রকল্প উন্নয়নে সুফল মিলবে বলেও তিনি মনে করেন।
প্রাক্–বাজেট আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদিকুন্নবী চৌধুরী। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, সিলেটে পর্যটনের সম্ভাবনা আকাশচুম্বী। পর্যটন হলো এমন এক খাত, যাতে কম বিনিয়োগে, প্রকৃতি ও পরিবেশকে অক্ষত রেখে দ্রুততম সময়ে ফল পাওয়া সম্ভব। প্রতিবছর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ ছাড়াই লাখো মানুষ এ অঞ্চলে ভ্রমণ করতে আসছেন। অথচ তাদের দেখভালের জন্য সত্যিকার অর্থে কোনো অভিভাবক নেই। তাই বৃহত্তর সিলেটের পর্যটন উন্নয়নে ‘সিলেট পর্যটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা গঠন করা যেতে পারে।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসিনা বেগম চৌধুরী, অধ্যক্ষ ভাস্কর রায়, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত, সুনামগঞ্জ সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ, সাংবাদিক মুক্তাদির আহমদ, পর্যটন ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির, সাস্ট বিজনেস ক্লাবের সভাপতি রাকিব আহমেদ প্রমুখ।