বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, চলমান আন্দোলন বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, তাদের হটানোর আন্দোলন। কর্মসূচিতে যত বাধা আসবে, ততই আন্দোলনে সফলতা আসবে।
বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুলনা নগরের কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।
আগামী শনিবার (২২ অক্টোবর) খুলনা নগরের সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ ও ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা’ একযোগে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন গয়েশ্বর রায়। তিনি বলেন, ‘একদিকে সরকারি পুলিশ আরেক দিকে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী বাহিনী বাধা তৈরি করছে। গ্রেপ্তার করছে, ভয় দেখাচ্ছে। যত তারা বাধা দেবে, তত জনগণের অংশগ্রহণ বাড়বে। কারণ, জনগণের আন্দোলন কখনো বাধা দিয়ে কোনো হ্যাডামি করে থামিয়ে রাখা যায় না। নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভ হবে না।’
মামলা, হামলা হলেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা বুকটান করে রাজপথে থাকবেন উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, ‘আমাদের অনেকের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে, সেই মামলার তোয়াক্কা আমরা করি না। কারণ, মৃত্যুর চেয়ে বড় শাস্তি নেই। এখন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি। অভাব-অনটন, নিরাপত্তাহীনতা, অবিচার—সবটা আছে। এমন কোনো কাজ নেই, যা এখন হচ্ছে না।’
গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে যান চলাচল বন্ধ রাখতে খুলনার পরিবহনমালিকদের বাধ্য করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন গয়েশ্বর রায়। পুলিশের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘দেশের পক্ষে থাকেন, জনগণের পক্ষে থাকেন। আমরা যা কিছু করছি, সংবিধান মেনেই করছি। যাঁরা বাধা দিচ্ছেন, তাঁরাই সংবিধান মানছেন না। আপনারা জানমালের নিরাপত্তা দেন। আন্দোলনরত নেতা–কর্মীদের হয়রানি করবেন না। সরকারের অন্যায় আদেশ মান্য করা আপনাদের দায়িত্ব নয়। সার্ভিস রুল অনুসরণ করুন। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বর্তমান সরকার যদি কোনো ক্ষয়ক্ষতি করে; গণতান্ত্রিক সরকার এলে আপনাদের ক্ষয়ক্ষতি আমরা সুদে-আসলে বুঝিয়ে দেব।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম করছে বিএনপি। এই সরকার উন্নয়নের নামে সিংহভাগ টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে। পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই সরকারের সঙ্গে জড়িত। সরকারের ব্যর্থতা ও লুটপাটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বিএনপি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে আন্দোলন করছে, অবৈধ পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের পর নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করলে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে নগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ও নেতা–কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ভয়ভীতি ছড়াতে মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবং অন্যান্য জেলা থেকে খুলনায় আসা বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অসংখ্য বাড়িতে চলেছে পুলিশের তল্লাশি অভিযান। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা এলাকাভিত্তিক নেতা–কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে নানা ধরনের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করছে। এ ছাড়া খুলনার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে আসার পথে নানা স্থানে বাস থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে মুঠোফোন, ফেসবুক চেক করা হচ্ছে। বিএনপিসংশ্লিষ্টতা পেলে মারপিট করে সবকিছু কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও শামসুজ্জামান দুদু, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী, সমাবেশের প্রধান সহসমন্বয়ক রকিবুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনিরুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।