নীলফামারীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে নীলফামারী শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত সাংবাদিক, পুলিশ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশের সঙ্গে র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা মাঠে নেমেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সকাল ১০টার দিকে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহরের পিটিআই মোড়ে সমবেত হতে থাকেন। সেখান থেকে তাঁরা শহীদ মিনার চত্বরে এসে সেখানে ছয়টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে চৌরঙ্গী মোড়ের দিকে অগ্রসর হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও চৌরঙ্গী মোড়ে অবস্থিত পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেন। এরপর আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভাঙচুর করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ অবস্থায় আন্দোলনকারীরা পিটিআই মোড়ে অবস্থান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় পুলিশের সঙ্গে লাঠিসোঁটা হাতে রাস্তায় নামেন ছাত্রলীগের সদস্যরা। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও গুলি করে।
আন্দোলনকারীদের ইটের আঘাতে এটিএন নিউজের ক্যামেরা পারসন সাদ্দাম হোসেনের মাথা ফেটে যায়। সেই সঙ্গে ১০ জন পুলিশ আহত হয়। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হন এনটিভির সাংবাদিক ইয়াছিন মোহাম্মদসহ অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী।
বেলা একটার দিকে আন্দোলনকারীরা পিছু হটলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের শহরে লাঠিসোঁটা হাতে টহল দিতে দেখা যায়। এ অবস্থায় শহরের বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
নীলফামারী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াদুদ রহমান বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা অংশ নিয়ে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় আমাদের ছয়জন নেতা কর্মী আহত হন।’
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তানভিরুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনকারীরা সহিংস অবস্থান নিলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় একজনকে আটক করা হয়। তাঁর নাম হোসেন আলী (২০)। তাঁর বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল। তিনি নীলফামারী নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্র।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীরা শহরে মিছিল করেন। একপর্যায়ে তাঁরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ, ডিসি অফিস, বাংলো ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর শুরু করেন। এ অবস্থায় তাঁদের নিবৃত্ত করার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ সময় র্যাব ও বিজিবি পুলিশকে সহায়তা করে। আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটপাটকেলে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।’