গানে শেখ হাসিনার নাম থাকায় ৫ আয়োজককে পুলিশে দেন যশোরের ডিসি

যশোরের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কারাতে প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে আটক পাঁচজনকে থানায় রাখা হয়। ৮ ঘণ্টা পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান তাঁরা। শুক্রবার রাতে যশোর কোতোয়ালি থানায়ছবি: সংগৃহীত

যশোরে একটি কারাতে প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৃত্যের সঙ্গে বাজানো গানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম থাকায় জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নির্দেশে পাঁচজনকে আটক করা হয়। দফায় দফায় ক্ষমা চেয়ে এবং শেষ পর্যন্ত আটকের ৮ ঘণ্টা পর মুচলেকা দিয়ে তাঁদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুরে যশোর জিমনেসিয়ামে এ ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ কারাতে অর্গানাইজেশন ‘পঞ্চম আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত কারাতে প্রতিযোগিতার’ আয়োজন করে। দুই দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল গতকাল। অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল যশোরের নারীভিত্তিক সংস্থা জয়তী সোসাইটি।

পুলিশ হেফাজতে নেওয়া পাঁচজন হলেন বাংলাদেশ কারাতে অর্গানাইজেশনের সভাপতি হুমায়ন কবির ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জয়তী সোসাইটি যশোরের নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক সংগঠন শেকড় যশোরের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা এবং বাংলাদেশ সোতোকান কারাতে দো অ্যাসোসিয়েশন (কিউখাই) খুলনা বিভাগের সদস্যসচিব ও যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্পন্দনের ফটোসাংবাদিক ইমরান হাসান। এর মধ্যে অর্চনা বিশ্বাস ২০২১ সালে রোকেয়া পদকে ভূষিত হন।

আয়োজক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চম আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত কারাতে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার ৩২০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করছেন। খেলোয়াড়, রেফারি ও বিচারক মিলিয়ে প্রায় ৫০০ জনের আয়োজন। গতকাল সকালে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। বেলা ১১টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যশোরের থিম সং হিসেবে পরিচিত ‘খেজুরের গুড় ফুলের মেলা, নকশিকাঁথার যশোর জেলা’ গানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সংগঠন শেকড় যশোরের শিশুশিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করছিল। এই থিম সংটি পাঁচ-ছয় বছর আগে রচিত। থিম সংয়ে যশোরের বিভিন্ন ঐতিহ্য ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাকে তুলে ধরা হয়েছে। যশোরকে পরিচিত করার জন্য নৃত্যের সঙ্গে থিম সংটি বাজানো হচ্ছিল। থিম সংয়ের শেষের দিকে এক জায়গায় শেখ হাসিনা আইটি পার্কের নাম আছে। ‘শেখ হাসিনা’ নামটি শুনেই জেলা প্রশাসক গান ও নৃত্য বন্ধ করতে বলেন। বন্ধ করার পর তিনি জানতে চান, এই গানে শেখ হাসিনার নাম এল কীভাবে?

আয়োজকদের পক্ষ থেকে বারবার ক্ষমা চাওয়া হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসক বলেন, অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক কর্মসূচির সবাইকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হবে এবং বিষয়টি তদন্ত করা হবে। এরপর বেলা ১টার দিকে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। মুচলেকা দিয়ে রাত ৯টার দিকে তাঁরা থানা থেকে ছাড়া পান। আয়োজকদের ভাষ্য, অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর জেলা প্রশাসক কারাতে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের দাপ্তরিক মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা দিলেও সাড়া দেননি তিনি।
পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ কারাতে অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই থিম সংয়ে যশোরের বিভিন্ন ঐতিহ্য ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাকে তুলে ধরা হয়েছে। থিম সংয়ের শেষের দিকে এক জায়গায় শেখ হাসিনা আইটি পার্কের নাম আছে। শেখ হাসিনা নামটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় আমরা ভুল বুঝতে পেরে বারবার দুঃখ প্রকাশ করি। ক্ষমা চাই। কিন্তু জেলা প্রশাসক পুলিশকে নির্দেশ দেন আমাদের থানায় নেওয়ার জন্য।’

কারাতে প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য আমন্ত্রণ পেয়ে অনুষ্ঠানে যান বলে জানান শেকড় যশোরের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা। তিনি বলেন, ‘আমার সংগঠনের শিশুশিল্পীরা যশোরের ব্র্যান্ডিং থিম সংয়ের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করছিল। কিন্তু থিম সংয়ে শেখ হাসিনা আইটি পার্ক উল্লেখ থাকায় গান ও নৃত্য পরিবেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমাদের থানায় নেওয়া হয়। সাদা কাগজে সই নিয়ে রাত ৯টায় পুলিশ আমাদের মুক্তি দেয়।’ তিনি বলেন, গান ও পরিবেশনা উদ্দেশ্যমূলক ছিল না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যা ঘটেছে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত।

৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নাম পরিবর্তন করে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নামকরণ করা হয়।

যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘ডিসি স্যারের নির্দেশে পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। ডিসি স্যার যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবে রাতে তাঁদের থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’