প্রয়াত স্ত্রীর ইচ্ছা পূরণে বট-পাকুড়ের বিয়ে, ছিল ভূরিভোজ
বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করছিল বিয়ের আসর। ঢাকঢোল আর সানাইয়ের শব্দে মুখর ছিল চারপাশ। এরই মধ্যে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ ও উলুধ্বনির মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয় দুটি গাছের। বিয়েতে কনে বেশে ছিল বটগাছ আর বর হয়েছিল পাকুড়গাছ (পাইকর)।
বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের দত্তপাড়া মহল্লায় করতোয়া নদীর তীরে হরিতলা কালীমাতা আসন চত্বরে এ আয়োজন করা হয়। প্রয়াত স্ত্রীর মনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ বিয়ের আয়োজন করেন শহরের গোসাইপাড়া মহল্লার প্রদীপ সরকার। হিন্দুধর্মীয় রীতি মেনে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানস্থলে পাঁচ শতাধিক নারী ও পুরুষের সমাগম ঘটে। বিয়ে শেষে তাঁদের ভূরিভোজ করানো হয়।
পুরোহিতের (ব্রাহ্মণ) লগ্ন অনুযায়ী গতকাল গোধূলিলগ্নে (সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়) এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। পুরোহিত ছিলেন অমিত তরফদার। তাঁকে সহায়তা করছিলেন রিপন চক্রবর্তী, শিব শঙ্কর অধিকারী ও গৌর নাথ চক্রবর্তী। বিয়ের আয়োজক স্থানীয় গোসাইপাড়া মহল্লার প্রদীপ সরকার।
বিয়ের আসরে গিয়ে দেখা গেল, বিয়ে ঘিরে সবার মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করছেন, নারীরা দিচ্ছেন উলুধ্বনি। ঢাকঢোল ও সানাইয়ের শব্দে মুখর চারপাশ। কনে বটগাছ ও বর পাকুড়গাছকে শাড়ি ও ধুতি-পাঞ্জাবি পরিয়ে সাজানো হয়েছে। বাদ যায়নি টোপর (মুকুট)। কেউ কেউ মুহূর্ত স্মরণীয় করতে সেলফি তুলে রাখছেন।
বিয়ের আসরে থাকা অন্তত পাঁচজন নারী প্রথম আলোকে বলেন, গোসাইপাড়ার প্রদীপ সরকারের স্ত্রী রিনা সরকার ২৮ বছর আগে হরিতলা কালীমাতা আসনের পাশে ওই গাছ দুটি রোপণ করেছিলেন। রিনার ইচ্ছা ছিল, গাছ দুটিকে ধুমধাম করে বিয়ে দেবেন। নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে থাকবেন বিভিন্ন মহল্লা থেকে আগত নারী ও পুরুষ। রিনা গত বছর অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে স্বামী প্রদীপ সরকার এ বিয়ের আয়োজন করেন।
জানতে চাইলে প্রদীপ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, স্ত্রীর (রিনা) ইচ্ছা পূরণের জন্য তিনি এ বিয়ের আয়োজন করেছেন। গাছ দুটি রোপণের পর নিয়মিত পরিচর্যা করেছেন তাঁর স্ত্রী। গাছ দুটিকে সন্তান হিসেবে দেখতেন। তিনি বলেন, পুরোহিতের লগ্নমতে ও হিন্দুধর্ম মেনে বিয়ের আয়োজন করা হয়। এতে তাঁর অন্তত ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মাধ্যমে তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর মনের আশা পূর্ণ হয়েছে।
বিয়ের আসরে এসেছিলেন শহরের দত্তপাড়া ও গোঁসাইপাড়ার রিনা রানী, আদুরী রানী, কাজলী রানী ও বিশাখা নামের কয়েকজন নারী। জানালেন, এমন বিয়ে তাঁরা প্রথম দেখলেন। বিয়েতে এসে তাঁরা অনেক আনন্দ করেছেন। বিয়ের পর তাঁরা ভূরিভোজও করেছেন।