সাভারে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে দুদকের অভিযান, আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু পাওয়ার দাবি
ঢাকার অদূরে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নে সাদিক অ্যাগ্রোর একটি খামারে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল। এ সময় দুদকের কর্মকর্তারা ওই খামারে আমদানি ও বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদন নিষিদ্ধ সাতটি ব্রাহমা জাতের গরুর বাছুর ও পাঁচটি গাভির বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন বলে দাবি করেন।
এ ছাড়া কর্মকর্তারা আলোচিত ১৫ লাখ টাকার ছাগলটিও ওই খামারে দেখতে পান। পরে খামার থেকে বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করেন। এর আগে দলটি সাভারের কেন্দ্রীয় গো–প্রজনন ও দুগ্ধ খামারেও যায়। সেখান থেকে গত রোজায় বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনকে দেওয়া ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরুর বেশ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করে তাঁরা।
৯ সদস্যের দুদকের দলটির নেতৃত্বে ছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে তাঁরা সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে কেন্দ্রীয় গো–প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে যান। কেন্দ্রীয় গো–প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের হেফাজতে ১৭টি ব্রাহমা গরু ছিল। এই গরুগুলো সাদিক অ্যাগ্রো যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধভাবে আমদানি করেছিল। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি মোট ১৮টি ব্রাহমা গরু যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধভাবে আমদানির পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তখন বিমানবন্দরে এগুলো জব্দ করেছিল। একটি গরু বিমানবন্দরে তখন মারা যায়। বাকি ১৭টি ব্রাহমা গরু সাভারের কেন্দ্রীয় গো–প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের হেফাজতে রাখা হয়। সেখানে পরে ২টি গরু মারা গেছে।
কেন্দ্রীয় গো–প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের হেফাজতে থাকা ওই ১৫টি ব্রাহমা গরু গত রোজার মধ্যে জবাই করে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে দুদকের কাছে অভিযোগ এসেছে, গরুগুলো জবাই করে সুলভ মূল্যে বিক্রি করার কথা থাকলেও জবাই না করে বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক ইমরান হোসেন গবাদিপশুর খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি। এ জন্যই অভিযোগ পেয়ে দুদকের দল ইমরান হোসেনের সাভারের খামারে আজ অভিযান চালায়।
দুদকের দল কেন্দ্রীয় গো–প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে ১৫টি ব্রাহমা গরুর নথিপত্র সংগ্রহ করে বেলা ৩টার দিকে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ভাঙ্গা ব্রিজ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের খামারে অভিযান চালায়। এ সময় ৫টি ব্রাহমা জাতের গাভির তথ্য ও ৭টি বাছুরের সন্ধান পায় তারা। অভিযানে দুদকের কর্মকর্তারা ওই খামারের একটি অংশে নীল রঙের পলিথিন দিয়ে চারপাশ ঢাকা অবস্থায় আলোচিত ১৫ লাখ টাকার ছাগলটি দেখতে পান।
অভিযান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘২০২১ সালে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধভাবে আমদানি করার পর বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ সেগুলো জব্দ করে। এর মধ্যে ৩টি মারা যাওয়ার পর ১৫টি গরু সাভারের কেন্দ্রীয় গো–প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে ছিল। গরুগুলোর বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় চলতি বছরের রোজার মধ্যে জবাই করে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে, গরুগুলো জবাই করে সুলভ মূল্যে বিক্রি করার কথা থাকলেও জবাই না করে বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।’
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সাভারের সাদিক অ্যাগ্রোর খামারটিতে অভিযান চালিয়ে সাতটি ব্রাহমা প্রজাতির বাছুর ও খামারের রেজিস্ট্রার খাতা থেকে পাঁচটি গাভির বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব নথিপত্র আমরা জব্দ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমরা কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন জমা দেব। এরপর কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তাদের (সাদিক অ্যাগ্রোর) দুটি খামারের বিষয়ে তথ্য পেয়েছিলাম। এখন আরও দুটি খামার তাদের রয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভারে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারটিতে গরুর শেড, উটের শেড, মুরগি ও হাঁসের শেড রয়েছে। এ ছাড়া এখান থেকে দুধ সংগ্রহ করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাদিক অ্যাগ্রোর অপর খামারটিতে নেওয়া হতো।
খামারের দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক জাহিদ খান বলেন, এই খামারটিতে মূলত দুধ উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে দুই বেলায় প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ লিটার দুধ এখান থেকে ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। খামারটিতে বর্তমানে গাভি ও বাছুর মিলিয়ে প্রায় ২৫০টি গরু রয়েছে। এ ছাড়া ১২টি উট ও দুটি ঘোড়াসহ কয়েক শ হাঁস-মুরগি রয়েছে। ঘোড়া দুটি এক ব্যক্তি কিনলেও এখানে রেখে পরিচর্যা করা হচ্ছে।
জাহিদ খান বলেন, ‘দুদকের স্যারেরা খামারে ব্রাহমা জাতের গরু আছে কি না, সেটি যাচাই করে দেখেছেন। তাঁরা আমাদের তিনটি খাতা নিয়ে গেছেন। আমি এখানে অল্প কিছুদিন হলো যোগদান করেছি। যতটুকু জানি ব্রাহমা জাতের গরু এখানে নেই।’