পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় পঞ্চম দিনে এসেও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের খোঁজে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। নিখোঁজ ব্যক্তিদের যেকোনো মূল্যে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন তাঁদের স্বজনেরা।
গত রোববার বেলা দেড়টার দিকে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সর্বশেষ লাশটি উদ্ধার করা হয় গতকাল বুধবার বিকেলে। এখনো নিখোঁজ তিনজন। তাঁদের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এর অংশ হিসেবে গত বুধবার রাত আটটার দিকে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে আবারও শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের রংপুর, রাজশাহী ও কুড়িগ্রামের ডুবুরিরা। স্বজন হারানো তিনটি পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জনকে ফিরে পেতে মাঝেমধ্যেই আসছেন নদীর পাড়ে। এ ছাড়া এখনো বিভিন্ন এলাকার অনেক মানুষ ভিড় করছেন ঘাটে।
বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় নিখোঁজ বাবার খোঁজে নদীর পাড়ে আসা কিশোর দীপন চন্দ্র বর্মনের (১৭) সঙ্গে। সে বলছিল, ‘ঘটনার দিন আমার মা-বাবা আর তিন বছর বয়সী ছোট ভাই দীপু নিখোঁজ হয়েছিল। এরপর দীপুকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও পরদিন আমার মায়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আর বাবা ভূপেন্দ্র নাথ বর্মনকে (৪০) এখনো খুঁজে পাইনি। আমার অনুরোধ, যেভাবেই হোক আমার বাবার সন্ধান দিন। আমরা তিন ভাই মাকে হারিয়েছি। এখন বাবাকেও খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা তো এতিম হয়ে গেলাম।’
জ্যোতিষ চন্দ্র রায় নামে একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা এসেছিলেন তাঁর হারিয়ে যাওয়া চার বছরের নাতনি জয়া রানীকে খুঁজতে। কান্না করতে করতে তিনি বলেন, ‘ফুলের মতো শিশুটা সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখত, আজ পাঁচ দিন হয়ে যাচ্ছে তাকে খুঁজে পাই না। এত লোকের লাশ খুঁজে পাওয়া গেল অথচ ছোট্ট শিশুটার লাশ পাই না। ভগবানের কাছে একটাই প্রার্থনা, আমি যেন আমার নাতনিটাকে খুঁজে পাই।’
এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার বিকেলে একটি লাশ উদ্ধারের পর মৃত লোকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯ জনে। তিনজন নিখোঁজ থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা ১২টি দলে বিভক্ত হয়ে করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাট থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। নিখোঁজ তিনজনকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ঘটনায় গঠন করা তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে রেলমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে এসে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ ও শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া তাঁরা নৌকাডুবির স্থল আউলিয়া ঘাট পরিদর্শন করেছেন।