রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর, মানসিক নির্যাতন ও ধর্ষণের হুমকির ঘটনায় সহপাঠীরা মানববন্ধন করেছেন। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এই কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে অংশ নিয়ে দ্রুত অভিযোগ তদন্ত করে বিচারের দাবি জানান তাঁরা।
আইইআরের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী তামিম আল নূরের সঞ্চালনায় তাঁর ব্যাচের মিনহাজ উদ্দিন, নাহিদ হোসেন ও দিপু চক্রবর্তী, পঞ্চম ব্যাচের মিঠু নন্দী, শামীম হোসেন ও উৎপল চন্দ্র প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘একজন মেয়ে কীভাবে পারে আরেকজন জুনিয়র মেয়েকে বন্ধুদের দিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের হুমকি দিতে? যাদের মুখ থেকে ধর্ষণের হুমকি আসে, তাদের সিনিয়র ভাইবোন বলতে লজ্জাবোধ করি। ভবিষ্যতে যে জুনিয়ররা আসবে, তারা যাতে ভীতসন্ত্রস্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, সে জন্যই আজ আমরা দাঁড়িয়েছি।’ তাঁরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান, যাতে পরবর্তী সময় এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন বলেন, দিনটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও লজ্জার। সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়রকে শারীরিক নির্যাতনসহ দলবদ্ধ ধর্ষণের হুমকির দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী যেন এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পান, সে জন্য কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের ‘অভিযোগ তদন্ত কমিটির’ আহ্বায়ক অধ্যাপক আকতার বানুর কাছে অভিযোগ জমা দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাতে প্রক্টর দপ্তরে ২ মার্চ একই অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় অভিযোগ জমা দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে অধ্যাপক আকতার বানু ডেকেছিলেন ভুক্তভোগী ছাত্রীকে। সেখানে তাঁর অভিযোগের বিষয়ে জবানবন্দি নেওয়া হয়। অভিযোগ দেওয়া আরেক ছাত্রকে আজ বিকেলে ডাকা হয়েছে।
এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি আইইআরের দ্বিতীয় ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এক ছাত্রীকে নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী আইইআরের পঞ্চম ব্যাচের ছাত্রী। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, নির্যাতনের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিফা হক ওরফে শেফা ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান। তাঁরা একই ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী। আর মারধরসহ নির্যাতনের বিষয়ে আরেকটি অভিযোগ তুলেছেন ইনস্টিটিউটের তৃতীয় ব্যাচের আরেক ছাত্র। তাঁর সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটে ২৫ ফেব্রুয়ারি।
অভিযোগ তদন্ত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকতার বানু আজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। এই ঘটনায় অভিযোগ আনা একাধিক শিক্ষার্থী ও সাক্ষীদেরও ডাকা হবে। এতে সময় লাগতে পারে। তবে তাঁরা চেষ্টা করছেন বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করতে। অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তিটা নির্ভর করে। র্যাংগিং হলে এক ধরনের শাস্তি, যৌন হয়রানি ও নির্যাতন হলে আরেক ধরনের শাস্তি। তাঁরা যে অভিযোগ পেয়েছেন, সেখানে দুই ধরনের অভিযোগই আছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, তিনি দুই শিক্ষার্থীর দুটি পৃথক অভিযোগ পেয়েছেন। এই বিষয়ে বিভাগে তদন্ত হচ্ছে।