সাত পৃষ্ঠার চিঠি লিখে গৃহবধূর ‘আত্মহত্যা’, স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌসীকে (১৯) আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে ওই গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় জান্নাতুলের স্বামী শিপন মিয়া, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদকে আসামি করা হয়েছে।
জান্নাতুল ফেরদৌসী উপজেলার বিশগিরিপাড়া গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের মেয়ে। সাত পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে গত শনিবার রাতে তিনি বাবার বাড়িতে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর বাবার বাড়ির সদস্যরা।
পুলিশ ও জান্নাতুলের পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে ফেসবুকে শেরপুর সদরের সাপমারী এলাকার শিপন নামের এক যুবকের সঙ্গে জান্নাতুলের বন্ধুত্ব হয়। ওই যুবক নিজেকে সেনাসদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে গড়ে ওঠে। গত বছর নভেম্বর মাসে পরিবারের অমতে তাঁরা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের পর জান্নাতুল জানতে পারেন, শিপন সেনাসদস্য নন, রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। তাঁর বড় ভাই সেনাবাহিনীতে কর্মরত। ভাইয়ের পোশাক পরে ফেসবুকে পোস্ট দিতেন শিপন।
জান্নাতুলের পরিবারের অভিযোগ, জান্নাতুলকে দিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন শিপন। এ ছাড়া চাকরি নেওয়ার কথা বলে ৮ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়। জান্নাতুল চার মাস আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসেন। যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জান্নাতুল স্বামীর বাড়িতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মৃত্যুর আগে সাত পৃষ্ঠার চিঠি লিখে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাবার বাড়িতে আত্মহত্যা করেন।
সেই চিঠিতে জান্নাতুল স্বামীর উদ্দেশে লেখেন, ‘অনেক ভালোবাসি তোমাকে শিপন। কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে দিলা না। অনেক ইচ্ছে ছিল, আমাদের সন্তান হবে, আমাকে মা ডাকবে। আর হলো না। দেখ, তুমি সব পাবে, শুধু আমি থাকব না। আমার সঙ্গে যেমন মিথ্যা বলেছ, আর কারও সঙ্গে বলো না।’
গতকাল রোববার ঘটনাস্থল থেকে লাশ ও চিঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই চিঠিতে জান্নাতুল স্বামীর উদ্দেশে লেখেন, ‘অনেক ভালোবাসি তোমাকে শিপন। কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে দিলা না। অনেক ইচ্ছে ছিল, আমাদের সন্তান হবে, আমাকে মা ডাকবে। আর হলো না। দেখ, তুমি সব পাবে, শুধু আমি থাকব না। আমার সঙ্গে যেমন মিথ্যা বলেছ, আর কারও সঙ্গে বলো না।’
জান্নাতুলের মা মাহমুদা বেগম অভিযোগ করেন, ‘আমাদের মেয়ের সঙ্গে শিপন প্রতারণা করে বিয়ে করছে। আমাদের মেয়েকে দিয়ে ঋণ করিয়েছে। মেয়ে একার সিদ্ধান্তে বিয়ে করায় সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেছে। আমার মেয়ে ঋণের ও যৌতুকের চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। আমি এর সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শিপনসহ অভিযুক্তদের বিচার চাই।’
আমাদের মেয়ের সঙ্গে শিপন প্রতারণা করে বিয়ে করছে। মেয়েকে দিয়ে ঋণ করিয়েছে। মেয়ে একার সিদ্ধান্তে বিয়ে করায় সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেছে। আমার মেয়ে ঋণের ও যৌতুকের চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।জান্নাতুলের মা মাহমুদা বেগম
এ ব্যাপারে শিপনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে জান্নাতুলের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।