এক বিয়ের বিপরীতে তিন কাবিননামা, এমন কাণ্ডে মামলা করলেন বিচারক

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে এক নারী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ মামলা করেছিলেন ২০২২ সালে। মামলা পর্যালোচনা করে বিচারক স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে আপস করার প্রস্তাব দেন। বিয়ের প্রমাণস্বরূপ মামলার বাদী ওই নারী আদালতে যে কাবিননামা উপস্থাপন করেন, সেখানে দেনমোহর ছিল আট লাখ টাকা। তবে তাঁর স্বামীও একই সময়ে পরপর দুটি কাবিননামা দেন আদালতে। যার একটিতে দেনমোহর এক লাখ টাকা ও অন্যটিতে তিন লাখ টাকা উল্লেখ ছিল।

এক বিয়ের বিপরীতে তিন কাবিননামা উপস্থাপনের ঘটনায় আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের তদন্তে দেখা যায়, আট লাখ টাকার দেনমোহরের কাবিননামাই সঠিক। বাকি দুটি কাবিননামা জাল। মূলত দেনমোহরের টাকা কম দিতেই বাদীর স্বামী দুই নিকাহ রেজিস্ট্রারকে টাকা দিয়ে জাল কাবিননামা তৈরি করিয়ে নেন।

এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের বিচারক ফেরদৌস আরা নিজে বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালতে মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় নগরের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী জাহাঙ্গীর আলম হেলালী, কাজী জামাল উদ্দিন ও নগরের হালিশহর বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী নারীর স্বামী মাহাবুব আলমকে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি শফিউল মোরশেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে জাল কাবিননামা তৈরির অভিযোগে বিচারক নিজে বাদী হয়ে দুই মুসলিম নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ভুক্তভোগী নারীর স্বামী মাহাবুব আলমের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রাররা এই কাজ করেছেন।

আদালত সূত্র জানায়, পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর তৎকালীন পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে বলা হয়, আট লাখ টাকা দেনমোহরের কাবিননামাটি সঠিক। এক লাখ টাকার কাবিননামাটিতে সই করেন নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী জামাল উদ্দিন , আর তিন লাখ টাকার কাবিননামাতে সই রয়েছে নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম হেলালীর। দুটি কাবিননামাই জাল।

এ দিকে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলা থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর খালাস পান মাহাবুব আলম। ভুক্তভোগী নারীর চিকিৎসা সনদ না থাকায় ট্রাইব্যুনাল আসামিকে খালাস দেন।

সরকারি কৌঁসুলি শফিউল মোরশেদ চৌধুরী বলেন, ট্রাইব্যুনাল স্বপ্রণোদিত হয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক, কাজীসহ ছয়জনের সাক্ষ্য নেন। পিবিআই আদলতে জব্দ করা দলিল, হাতের লেখা বিশারদের প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাবিননামার বিবাহ ও তালাক নিবন্ধনের মূল বালাম বইয়ের পর্যালোচনা করেন আদালত। এতে ট্রাইব্যুনাল নিশ্চিত হন, দুই নিকাহ রেজিস্ট্রারকে দিয়ে ওই নারীর স্বামী মাহাবুব আলম এক লাখ ও তিন লাখ টাকার জাল কাবিননামাগুলো তৈরি করেছেন। তিনি তাঁর স্ত্রীকে কম দেনমোহর দেওয়ার জন্য অনৈতিকভাবে এই কাজ করেছেন।

জানতে চাইলে নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. সারুয়ারে আলম প্রথম আলোকে বলেন, মামলার আসামি হওয়া দুই নিকাহ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। মামলাও রয়েছে। তাঁদের বারবার সতর্ক করা হলেও অন্যায়ে জড়িত রয়েছেন। কেউ অপরাধ করলে তার দায়ভার সমিতি নেবে না। অপরাধীর শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে অন্যরা এ পথে পা না বাড়ান।