নারী নেত্রী আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে জন্মস্থান ভৈরবে ছিল না কোনো কর্মসূচি
নারী নেত্রী আইভি রহমানের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। ২৪ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান তিনি। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে তাঁর স্বামী ও বাবার বাড়ি। প্রতিবছর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আইভি রহমানকে স্মরণ করা হতো। কিন্তু এ বছর তাঁর জন্মস্থান ভৈরবে ছিল না কোনো কর্মসূচি।
আইভি রহমানের স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। তাঁর ছেলে সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান ছিলেন কিশোরগঞ্জ–৬ আসনের (ভৈরব–কুলিয়ারচর) টানা চারবারের সংসদ সদস্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট আইভি রহমানের মৃত্যুর খবরে ভৈরবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। বিক্ষুব্ধ জনতা সেদিন একটি আন্তনগর ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর প্রতিবছর আওয়ামী লীগ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আইভি রহমানকে স্মরণ করে আসছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি হন। জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ায় কিশোরগঞ্জ-৬ সংসদীয় আসনটি শূন্য হয়। পরে শূন্য আসনে উপনির্বাচনের মাধ্যমে নাজমুল হাসান নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন।
স্বামী ও ছেলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসায় ভৈরবে আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষভাবে পালন করা শুরু হয়। দলীয় কর্মসূচির বাইরেও স্থানীয় সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আইভি রহমানকে স্মরণ করত। আইভি রহমানের স্মৃতি ধরে রাখতে কয়েক বছর আগে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাঁর ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়। পৈতৃক বাড়ি ভৈরব পৌর শহরের চণ্ডিবের কামাল সরকার বাড়ি সড়কে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিফলক। পৌর স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় শহীদ আইভি রহমান পৌর স্টেডিয়াম। প্রতিবছর মৃত্যুবার্ষিকীতে ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হতো। এবার এসবের কিছুই হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, সরকার পতনের দিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতার বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমানের ম্যুরালের পাশাপাশি আইভি রহমানের ম্যুরালও ভাঙচুর করা হয়। স্টেডিয়াম থেকে নামফলক মুছে ফেলা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা গা ঢাকা দিয়ে আছেন। এ অবস্থায় আইভি রহমানকে প্রকাশ্যে স্মরণের সুযোগ ছিল না।
আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন না করার বিষয়ে ভৈরব পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশের কারণে আইভি রহমানকে আমরা এ বছর প্রকাশ্যে স্মরণ করতে পারিনি। তবে আমরা তাঁকে হৃদয়ে অনুভব করেছি।’
আইভি রহমান ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সমাবেশে আইভি রহমান সামনের সারিতে বসে ছিলেন। গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তাঁকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়। সেখানেই ২৪ আগস্ট তিনি মারা যান।