খুলনায় অস্থায়ী মার্কেটে আগুন, সব হারিয়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ীরা

খুলনা নগরীর পিকচার প্যালেজ সুপার মার্কেটে ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে ৪৪টি দোকান। ঠিক ঈদের আগের এমন ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাছবি: প্রথম আলো

ঈদ সামনে রেখে খুলনা নগরের ‘পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেটের’ পাঁচটি দোকানে প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল তুলেছিলেন বিসমিল্লাহ ব্যাগ হাউসের মালিক শান্ত ইসলাম। আজ বুধবার ভোররাতে আগুনে তাঁর দোকানের সব মালামাল পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে গেছে, কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঘটনার পর থেকে শোকে বিহব্বল শান্ত কয়েকবার মূর্ছাও গেছেন।

শুধু শান্ত ইসলাম নয়, হঠাৎ আগুনে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন ওই মার্কেটের প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী। কোনো মালামালই তাঁরা আগুন থেকে রক্ষা করতে পারেননি। ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

দোকান মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্কেটের ওই জায়গায় ছিল খুলনার ঐতিহ্যবাহী পিকচার প্যালেস সিনেমা হল। হলের নামানুসারে জায়গার নাম হয়ে যায় পিকচার প্যালেস। প্রায় দুই বছর আগে সিনেমা হলটি ভেঙে ফেলা হয়। সেখানে বহুতল বিপণিবিতান করার পরিকল্পনা করেছিল মালিকপক্ষ। তবে জমি নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় শেষ পর্যন্ত আর মার্কেট নির্মাণ করা হয়নি। পড়ে থাকা জমি ইজারা নিয়ে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান সেখানে অস্থায়ী মার্কেট গড়ে তোলে। নাম দেওয়া হয় ‘পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেট’।

আজ বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ওই মার্কেটের দক্ষিণ দিকের একটি কাপড়ের দোকানে আগুন লাগে। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো মার্কেটে। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে দোকানের মধ্যে থাকা কর্মচারীরা শুধু বের হতে পেরেছিলেন। কোনো মালামাল তাঁরা রক্ষা করার সুযোগ পাননি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেটে প্রসাধনসামগ্রী, ক্রোকারিজ, ব্যাগ, কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্যের ৪৫টি দোকান ছিল। সব কটি দোকানই একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে ৫০-৫৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তাঁদের।

আজ সকাল ১০টার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো জায়গাটি পোড়া ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব মালামাল ও আসবাব। শুধু পড়ে আছে টিন বা লোহার জিনিসপত্র। সেগুলো আলাদা করে সরিয়ে রাখা হচ্ছে এক পাশে। ওই কাজ করছেন বেশ কয়েকজন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনেকেই কিছু খোঁজার চেষ্টা করছেন। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন ব্যবসায়ীরা। কী করবেন, কী বলবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না।

বিসমিল্লাহ ব্যাগ হাউসের কর্মচারী রানা তালুকদার জানান, তাঁদের পাঁচটি দোকানে কসমেটিকস, ব্যাগসহ প্রায় এক কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের মালামাল ছিল। গত তিন-চার দিনে সবচেয়ে বেশি মালামাল তোলা হয়। ঈদ সামনে রেখে মালিক বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে এসব মালামাল তুলেছিলেন। সব একেবারে পুড়ে গেছে। মালিক নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

রানা তালুকদার বলেন, ঘটনার সময় তিনি দোকানের মধ্যেই ছিলেন। কেবল সাহ্‌রি খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলেন। এ সময় চিৎকার শুনে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেন, দক্ষিণ দিকের একেবারে শেষ প্রান্তের একটি দোকানে আগুন লেগেছে। পানি দিয়ে তা নেভানোর চেষ্টা করছিলেন কয়েকজন। সেটি দেখে তিনি দোকানের অন্য কর্মচারীদের ডাকার জন্য আসেন। এরই মধ্যে দেখেন, আগুন পাশের দোকানে চলে এসেছে। অন্যদের ডাক দিয়ে কোনোরকম মুঠোফোন নিয়ে বের হতে পেরেছেন। তিন-চার মিনিটের মধ্যেই আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে বলে তিনি জানান।

ওই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী মো. শামীম শরিফ বলেন, ‘শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে আবার কেউ শত্রুতা করে আগুন ধরিয়েও দিতে পারে। তবে চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে দোকানে মালামাল তুলেছিলেন। এখন দেনা পরিশোধ তো দূরে থাক, নিজেদের সংসার চালানোরমতো কোনো অবস্থা নেই। ব্যবসায়ীরা যেন মোটামুটিভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি তিনি অনুরোধ করেন।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের খুলনার উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টুটপাড়া, খালিশপুর ও বয়রা স্টেশনের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজে নামে। কেন ও কী কারণে আগুন লেগেছে, তা তদন্ত না করে বলা যাবে না। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত কমিটি করা হবে।