ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীদের আদালত বর্জন চলছেই, হতাশ বিচারপ্রার্থীরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা আইনজীবী সমিতির টানা কর্মবিরতিতে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ কারণে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার বিচারপ্রার্থী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিচারপ্রার্থীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আদালতে এসে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
আজ মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়া অনেক বিচারপ্রার্থীকে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। হৃদয় হোসেন তাঁর বাবা-মাকে নিয়ে সকালে আদালত চত্বরে বসে ছিলেন। যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলায় তাঁর সঙ্গে মা-বাবাও আসামি। আদালতে এই মামলার হাজিরা ছিল আজ। কিন্তু আইনজীবীদের কর্মবিরতিতে সৃষ্ট অচলাবস্থার জন্য কোনো আদালতেই বিচারিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে হৃদয় ও তাঁর মা-বাবা হতাশ হয়ে আদালত চত্বরে বসে ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার জগৎসার গ্রামের সুরাইয়া বেগম তাঁর স্বামী ফারুক মিয়ার পক্ষে আদালতে এসেছেন। ফারুক মিয়ার বিরুদ্ধে এক নারীর নির্যাতনের মামলা করেছেন। জেলা জজ আদালতের নিচতলায় তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘২০১০ সালের এক প্রতারক নারী ফাঁদে পড়ে আমার স্বামী। ওই নারী আমার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করে। আজ মামলায় আদালতে হাজিরা ছিল। আদালতে কোনো কার্যক্রম না হলেও উকিলকে ঠিকই ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে।’
৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা সাধারণ সভা করে কর্মবিরতির ডাক দেন।
সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের আবদুল বাতেন বলেন, ‘জায়গা-সংক্রান্ত একটি মামলায় ১৪৪ ধারার বিষয়ে আজ শুনানির তারিখ ছিল। সকালে ২০০ টাকা খরচ করে আদালতে আসি। কিন্তু আদালত নাকি আজ বন্ধ। তারপর ওদের ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। যেতে আরও খরচ লাগবে ২০০ টাকা।’
জেলা আইনজীবী সমিতি জানিয়েছে, প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার বিচারপ্রার্থী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বুধবার থেকে পাঁচ দিনের (শুক্র ও শনিবার বাদে) হিসাবে ৬০ থেকে ৮০ হাজার বিচারপ্রার্থী দুর্ভোগে পড়েছেন।
গত ১ ডিসেম্বর শীতকালীন ছুটির আগে আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন তিনটি মামলা না নেওয়ায় ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। এরপর ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাস চলাকালে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ৪ জানুয়ারি জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন আদালতের সব এজলাসের দরজা ও প্রধান ফটকে তালা দিয়ে এক দিনের কর্মবিরতি পালন করে। এর প্রতিবাদে ৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা সাধারণ সভা করে তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতির ডাক দেন, যা গতকাল সোমবার আরও তিন দিন (বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) বাড়ানো হয়।
এদিকে জেলা জজসহ দুই বিচারকের অপসারণ ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি আদায় না পর্যন্ত আইনজীবীরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।