ছয় মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৪০)। কোমরে ব্যথা নিয়ে কাজ করতে পারেন না। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে রফিকুলের স্ত্রী শাহানা বেগম সংসারের হাল ধরেন। এর মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি শাহানা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিন শিশুসন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন রফিকুল। এ নিয়ে গত বুধবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘সদ্য মাহারা তিন সন্তান নিয়ে অসুস্থ রফিকুলের কষ্টের জীবন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর দুই ব্যক্তি রফিকুল ইসলামকে নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি ও জার্মানিপ্রবাসী সাবরিনা ইব্রাহিম মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রফিকুল ইসলামকে টাকা পাঠিয়েছেন। টাকা পেয়ে গতকাল শনিবার রফিকুল তাঁর এক বছরের ছেলে মাহমুদউল্লাহর জন্য এক কৌটা গুঁড়া দুধ কিনেছেন। আর দুই মেয়ের পছন্দের মাছ ও ডিমের সঙ্গে চাল ও সবজি কিনেছেন।
গতকাল রাতে অনেক দিন পর মেয়েদের নিয়ে মাছ দিয়ে ভাত খেয়েছেন রফিকুল। স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার ও ডাল শাক দিয়ে খাওয়াদাওয়া চলছিল। আজ রোববার সকালে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১ ফেব্রুয়ারি আমার স্ত্রীর মারা যায়। এরপর প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়ে কয়েক দিন পার করেছি। প্রতিবেশীরা খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিলে আমার মেজ বোন তাসলিমা আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এ সময় ডাল ও শাক দিয়ে খেয়েছি। এক বছরের ছেলে মাহমুদউল্লাহকে ডাল দিয়ে ভাত নরম করে খাইয়েছি। পরে দুজন আমাকে কল করে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। আমার দুই মেয়ে মাছ ও ডিম পছন্দ করে। ছোট ছেলেটা মা মারা যাওয়ার পর থেকে দুধ খেতে পারেনি। এ জন্য গতকাল দুপুরে বাজার করেছি। রাতে মেয়েদের মাছ দিয়ে ভাত খাইয়েছি। ছেলেকে দুধ খাওয়াচ্ছি। আজ সকালে দুই মেয়েকে স্কুলেও পাঠিয়েছি।’
রফিকুলের বড় মেয়ে বিলকিস আক্তার বলে, ‘গতকাল রাতে অনেক দিন পর মাছ দিয়ে ভাত খেয়েছি। সকালে চা-বিস্কুট খেয়ে স্কুলে এসেছি।’
মায়ের সূত্রে পাওয়া ছয় শতাংশ জমি ছাড়া রফিকুলের তাঁর কোনো সম্পদ নেই। রফিকুলের দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মায়ের সূত্রে পাওয়া জমিতে তিনি বসবাস করেন। তবে ছয় শতাংশ জমি পেলেও দখলে আছে তিন শতাংশ। সেই জমিতে সরকার থেকে পাওয়া ঘরে স্ত্রী শাহানা বেগম, তিন সন্তান বিলকিস আক্তার (৭), সুমাইয়া আক্তার (৪) ও এক বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। হঠাৎ স্ত্রী মারা যাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে তিনি চরম কষ্টে দিন পার করছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় কাজও করতে পারছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছয় মাস আগে দিনমজুর রফিকুল ইসলামের কোমরে ব্যথা শুরু হয়। ব্যথার কারণে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছিলেন না। চিকিৎসা নিলেও শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। কোমরে ব্যথার কারণে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েন। পরে সংসারের হাল ধরেন স্ত্রী শাহানা বেগম। গত ৩১ জানুয়ারি রাতে শাহানা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথাব্যথায় ছটফট করছিলেন। পরদিন ভোরে শাহানা বেগমকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে তিনি মারা যান। এর পর থেকে ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে কূলকিনারা পাচ্ছেন না রফিকুল।
ইন্দুরকানি প্রেসক্লাবের সদস্য ও গাবগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা গাজী মো. আবুল কালাম বলেন, রফিকুল ইসলাম কাজ করতে পারেন না। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনটি শিশু নিয়ে তিনি খুব কষ্টে আছেন। প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়ে তাঁর জীবন চলছিল। প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর দুই ব্যক্তি আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। এই অর্থ দিয়ে পরিবারটি কিছুদিন ভালোভাবে চলতে পারবে।