খুপরিতে মানবেতর জীবন বৃদ্ধ দম্পতির, খোঁজ নেন না সন্তানেরা
৯৫ বছরের জব্বার মণ্ডল বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ। নানা রোগে শরীর বেঁধেছে। আয়ের কোনো পথ নেই। মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই রাস্তার পাশের একটি খুপরি। সংস্কারের অভাবে ঘরটিও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর দিন কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে। জব্বার মণ্ডলের তিন মেয়ে ও এক ছেলে আছেন, কেউ তাঁদের খবর রাখেন না।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ি পৌরসভার আদিয়ারপাড়া এলাকায় জব্বারের বাড়ি। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়কের মেলান্দহ উপজেলার দাঁতভাঙা সেতুর পাশেই একটি খুপরি। সেখানেই জব্বার মণ্ডল দম্পতি থাকেন। তাঁরা দুজনই অসুস্থ। ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারেন না। খুপরির বাঁশের খুঁটিগুলোও ভেঙে যাচ্ছে। ঘরটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঘরের বেড়াও ভেঙে গেছে। তাঁরা বলেন, বৃষ্টির মধ্যে পুরো ঘরেই পানি পড়ে। যেদিন বৃষ্টি হয়, সেদিন ওই দম্পতি নির্ঘুম রাত কাটান।
জব্বার মণ্ডল বলেন, ২০ বছর আগে অসুস্থ হয়ে প্রথম স্ত্রী মারা যান। এর কিছুদিন পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু পারিবারিক নানা ঝামেলার কারণে ছেলে–মেয়েরা তাঁকে আর নিজ বাড়িতে উঠতে দেননি। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী আঙ্গরী বেগমের (৬০) বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু আঙ্গরীর পরিবারও খুব দরিদ্র। তারপরও ছোট্ট একটি ঘরে ১৫ বছর আঙ্গরী বেগমের বাবার বাড়িতে ছিলেন। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা ওই ঘর ছেড়ে দিতে বলেন। কোনো উপায় না পেয়ে পাঁচ বছর ধরে হাজরাবাড়ি পৌরসভার দাঁতভাঙা সেতু এলাকায় একটি খুপরি তুলে বসবাস করছেন তাঁরা। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো সন্তান নেই।
জব্বার মণ্ডলের ভাষ্য, তাঁর সব জমি প্রথম স্ত্রী থাকা অবস্থায় ছেলে-মেয়েদের লিখে দিয়েছেন। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সম্পত্তি ও গবাদিপশু সন্তানেরা ভাগাভাগি করে নিয়ে যান। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েন। ছেলে-মেয়েরা তাঁর খোঁজখবর নেওয়া কমিয়ে দেন। ঠিকমতো খাবারও দিতেন না। পরে বাধ্য হয়েই তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। এরপর আর ছেলে-মেয়েরা তাঁর কোনো খোঁজ নেননি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে কিছু হাঁস-মুরগি লালন-পালন এবং সরকারি ভাতা দিয়ে কোনোরকমে জীবন যাপন করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জব্বারের একমাত্র ছেলে জহুরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে জহুরুল ইসলামের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘আমার শ্বশুরের কিছু সম্পদ ছিল। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর সব বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন আর কিছুই নেই। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর আমরা তাঁকে বাড়িতে আনছিলাম। একটি ঘরও ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি থাকেননি।’
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম মিঞা বলেন, ওই দম্পতির বিষয়টি কেউ নজরে আনেননি। ওই দম্পতির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সহযোগিতা করা হবে।