চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থী
চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের দুজন প্রার্থীই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা আনুষ্ঠানিক এই ঘোষণা দেন।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো এই দুজন হলেন চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা ও সদরের একাংশ) আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সোহরাব হোসেন এবং চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা, জীবননগর ও সদরের একাংশ) আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম।
পেশায় আইনজীবী দুজনই অভিন্ন ভাষায় বলেন, নির্বাচনী বৈতরণি পার করার মতো কোনো অর্থ না থাকা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেহেতু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় নেই, বাধ্য হয়ে ভোট থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এবং আগামী দিনে এই (জাপা) দলের সঙ্গে থাকবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন।
তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর জাপার ভোটারদের অবস্থান কী হবে, তা নিয়েও খোলাসা করেন দুই নেতা। তাঁরা বলেন, চুয়াডাঙ্গা দুই আসনে এখনো জাপার ৫০ হাজার করে অন্তত ১ লাখ ভোটার আছেন। তাঁদের দুজনের কাছে সব প্রার্থীই সমান। স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থী যাঁরা আছেন, তাঁদের কারও প্রতি তাঁদের ক্ষোভ নেই, দুঃখ নেই। তাই ব্যক্তিগতভাবে কাউকে সমর্থন করার নির্দেশনা দেবেন না। জাপার নেতা-কর্মীরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।
দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাপার ২৮৩ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ২৬ জন ছাড়া বাকি ২৫৭ জনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী, তাঁরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আসবেন। জাপার যেসব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাতে ৫টি আসনেও জিতবে কি না, সন্দেহ আছে। আমাদের কথা, জাপার ওই ২৬ জন বাদে যাঁরা এখনো ভোটে আছেন, তাঁরা সরে আসতে পারলেই সবচেয়ে ভালো।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সোহরাব হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় ভোট প্রার্থনা করে আসছিলাম। দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নির্বাচনসংক্রান্ত একের পর এক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাপার ২৮৩ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ২৬ জন ছাড়া বাকি ২৫৭ জনের সঙ্গে বৈরিতা, অসহযোগিতা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। ১৮ ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের আচরণে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় আছি।’
সোহরাব বলেন, ‘যেহেতু চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মাত্র ২৬ জন প্রার্থীকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো সুবিধা পেয়েছেন এবং বাকি ২৫৭ জন প্রার্থীকে নির্বাচনী মাঠে বঞ্চিত করা হয়েছে, আমরা আর্থিকভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। নির্বাচনী মাঠে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের নানা সময়ে নানা রকম নির্বাচনবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা প্রার্থীরা সাধারণ মানুষসহ এলাকার ভোটারদের কাছে হেয় প্রতিপন্ন ও নিন্দিত হচ্ছি। সেহেতু আত্মসম্মান রক্ষার্থে, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং অসহযোগিতার জন্য বাধ্য হয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলাম।’
আপনাদের সরে যাওয়ার ফলে নির্বাচনের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহরাব বলেন, ‘নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্বাচন নির্বাচনের গতিতেই হবে। যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী, তাঁরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আসবেন। জাপার যেসব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাতে ৫টি আসনেও জিতবে কি না, সন্দেহ আছে। আমাদের কথা, জাপার ওই ২৬ জন বাদে যাঁরা এখনো ভোটে আছেন, তাঁরা সরে আসতে পারলেই সবচেয়ে ভালো।’
জেলা জাপা সভাপতি আরও বলেন, জি এম কাদের ও ফজলুল হক চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে যে ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা দলকে কোরবানি করেছেন। জাতীয় পার্টিকে কোরবানি করেছেন। আগামী দিনে জাতীয় পার্টিকে সারা বাংলাদেশে কোথাও টিকিয়ে রাখার সামর্থ্য দলের নেতাদের নেই।
কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সোহরাব বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়ে এলেও কোনো দিন দল থেকে কোনো তহবিল দেওয়া হয়নি। লাখ লাখ টাকা আমি দলের জন্য খরচ করেছি। আমরা দলকে টাকা দিয়েছি, দল আমাদের কিছুই দেয়নি।’
রবিউল ইসলাম সভাপতির বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা চুয়াডাঙ্গা সফর করবেন, এমনটিই আশা করছিলাম। তাঁরা আমাদের সহযোগিতা তো দূরে থাক, একটু আশ্বস্তও করেননি।’