টানা চার দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়, বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
দেশের সর্ব–উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টানা চার দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। টানা পাঁচ দিন ধরে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কুয়াশা না থাকায় আর মেঘমুক্ত আকাশে সকাল সকাল সূর্য উঠে দিনভর তাপ ছড়াচ্ছে। এতে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কনকনে শীতে অনুভূত হলেও দিনের বেলা স্বস্তি মিলছে।
আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য, কোনো এলাকার দিনের সর্বনিম্ন তাপামাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ওই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে টানা পাঁচ দিন ধরে পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে। তবে কুয়াশা কম থাকায় সকাল সকাল ঝলমলে রোদের দেখা মিলছে। হিমালয়ের হিম বায়ু সরাসরি এই এলাকায় প্রবেশ করায় রাতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ শনিবার সকাল নয়টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় তেঁতুলিয়ায় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৭ শতাংশ। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার। এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে তৃতীয় দফায় শুরু হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গত মঙ্গলবার থেকে আজ পর্যন্ত পাঁচ দিন তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
গত বুধবার থেকে টানা চার দিন তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই চার দিন তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করেছে। তবে প্রতিদিনই দিনের বেলা রোদ থাকায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার বিকেলে তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশা না থাকায় সকাল সকাল দেখা মিলেছে ঝলমলে রোদের। উত্তরের ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাসে অনুভূত হচ্ছে শীত। গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন সাধারণ মানুষ। কৃষকেরা গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে বাজারে নেওয়ার জন্য খেত থেকে সংগ্রহ করছেন শাকসবজি। চা–শ্রমিকেরা সমতলের চা–বাগান থেকে সংগ্রহ করছেন চা–পাতা। কেউ কউ জমিতে করছেন হালচাষ, আবার কেউবা বুনছেন নানা ফসলের বীজ। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের তীব্রতা বাড়ায় বেশ স্বস্তিতে কৃষিজমিতে কাজ করতে দেখা গেছে কৃষক ও শ্রমিকদের।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার গোফাপাড়া এলাকায় একটি চা–বাগান থেকে পাতা সংগ্রহ করছিলেন সাদেকুল ইসলামসহ কয়েকজন শ্রমিক। কথা প্রসঙ্গে সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘কয়দিন তকা (থেকে) রাতিত ঠান্ডা (শীত) বেশি। সকালে যেলা (যখন) পাতা কাটিবা আসি সেলা (তখন) খুপে ঠান্ডা। বেলা ওঠার পর ঠান্ডা কমে গেইছে। এ্যালা রোদখান ভালয় নাগেছে।’ পাশেই গম খেতে গমগাছে লেগে থাকা কুয়াশা ঝেড়ে দেওয়ার কাজ করছিলেন জগদীশ চন্দ্র নামে একজন কৃষক। তিনি বলেন, ‘এইবার দিনের থেকে রাইতোত (রাতে) ঠান্ডা বেশি। তবে সারা দিন কাজকাম ভালোমতো করা যাছে।’