‘সরকার এত নিপীড়নের পরও কোনো প্রকার দায়দায়িত্ব স্বীকার করেনি’
‘সরকার একটি মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এই দেশটিতে এখন কোনো গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা আছে, এটি মনে করার কোনো কারণ অবশিষ্ট নেই। সরকার আজ পর্যন্ত এত নির্মমতা, এত হত্যাকাণ্ড, এত নির্যাতন, এত নিপীড়নের পরও কোনো ধরনের দায়দায়িত্ব স্বীকার করেনি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে দেখেছি, এই সহিংসতা ছড়ানোর পেছনে একজন মন্ত্রীর কী পরিমাণ দায় রয়েছে। তিনি একটি বিশেষ ছাত্রসংগঠনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার পরেই কিন্তু সংঘর্ষ ছড়িয়েছে। এই আন্দোলন এখন আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই। এটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন হয়ে গেছে। একটি রাষ্ট্র যখন সংকটে পতিত হয়, একটি রাষ্ট্রের যখন আমূল পরিবর্তনের দরকার হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
আজ বুধবার বেলা একটার দিকে কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির ডাক দেয়। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনসংলগ্ন মহুয়া মঞ্চের সামনে জড়ো হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের ১০-১৫ জন শিক্ষক যোগ দেন। মিছিলটি শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়ক, নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তাঁরা।
পরে একই স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেপ্তার সব শিক্ষার্থীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর করেন।
সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বলেন, ‘পুরো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কতগুলো উসকানি দেওয়ার কারণে। নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুতে বাংলাদেশের এমন কোনো বর্গ নাই, যেখানে একান্তে মানুষ হাহাকার না করছেন। কান পাতলেই সরকার ও সরকারপন্থী গায়েনরা এসব কথা শুনতে পারত। এই মুহূর্তে যে ধরনের ধরপাকড় চলছে, সেই মডেলটি খুবই পরিচিত। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের ধরপাকড়ের ইতিহাস নাই। বাংলাদেশের জেলায় জেলায়, মহকুমায় মহকুমায়, থানায় থানায়, এমনকি শুধু শিক্ষার্থী নয়, সাধারণ শ্রমিকদের টার্গেট করে গুলি করে হত্যা করা সরকার যেমন গোঁয়ার্তুমি করে নো রিটার্নে গেছে, আমরাও হকের জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য, স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য পয়েন্ট অব নো রিটার্নে আছি।’
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলনের সময় যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, আজকের ঘটনাগুলোর কাছে সেগুলো একদমই শিশুর মতো। স্বাধীন বাংলাদেশে এত মৃত্যু একসঙ্গে বাংলাদেশে এর আগে কখনো ঘটেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিহা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো একক দলের চেতনা নয়। স্বাধীনতার চেতনা কোনো একক দলের চেতনা নয়। স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাম্যের চেতনা সারা বাংলার মানুষের চেতনা।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের পর আপনি যাকেই মন চায়, তাকেই তুলে এনে বলবেন যে জামায়াত-শিবির হিসেবে তুলে এনেছি। এসব করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, শিক্ষার্থীরা যদি তার ক্যাম্পাসে থাকতে না পারে, বাসস্থানে থাকতে না পারে, তাহলে আপনার গণভবনেও তারা আপনাকে থাকতে দেবে না। অতএব নিজের বাসস্থানে যদি থাকতে চান, শিক্ষার্থীদের বাসস্থানের অধিকারও আপনি ঠিক রাখুন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আবদুর রশিদ বলেন, ‘সরকারের অনেক মন্ত্রী এবং অনেকেই আমাদের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। যাঁরা শহীদ হয়েছেন, নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে কোনো সহানুভূতির বার্তা না দেখিয়ে তাঁরা আমাদের নিয়ে বিভিন্ন প্রহসন করছেন। তাঁরা দিনে নাটক করছেন, রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আটক করছেন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার সব শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিসহ ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’