সুনামগঞ্জে ঢলের পানিতে বেড়িবাঁধে ভাঙন, ১০টি গ্রাম প্লাবিত

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষীপুর ইউনিয়নের নোয়ারাই গ্রামে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়া ঘরবাড়ি। শনিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা নদীর বেড়িবাঁধের তিনটি স্থান ভেঙে গেছে। এতে উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি দ্রুত নামতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জ ও জেলার উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হয়। এর ফলে আজ শনিবার সকাল থেকে উজানের পাহাড়ি ঢল নামতে থাকে। সকাল আটটা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢলের পানির প্রবল তোড়ে খাসিয়ামারা নদীর বেড়িবাঁধের তিনটি অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খাসিয়ামারা নদীতীরের বক্তারপুর, চৌকিরঘাট, ইদ্রিসপুর, ঝিরারগাও, লক্ষ্মীপুর, নোয়াপাড়া, রসরাই, সুলতানপুর, এরুয়াখাই, মাঠগাও, রণভূমি গ্রাম প্লাবিত হয়। মানুষের বাড়িঘরে ঢলের পানি প্রবেশ করায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে লোকজন। ঢলের পানির স্রোতে অনেকের বসতঘরের ক্ষতিও হয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েন অনেকে। তলিয়ে যায় আমনের বীজতলা, আউশ ও সবজিখেত।

আরও পড়ুন

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন ঘণ্টার ঢলে বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। অনেকের ক্ষতি হয়েছে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। বিকেলের দিকে পানি অনেকটা কমেছে। বৃষ্টি আর না হলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।’

উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেঙে যাওয়া খাসিয়ামারা নদীর বেড়িবাঁধ। শনিবার সকালে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নে
ছভি: প্রথম আলো

দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আম্বিয়া আহমদ বলেন, উজানে বেশ বৃষ্টি হওয়ার কারণেই ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামে। এতে খাসিয়ামারা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এ কারণেই মানুষের বাড়িঘরে ঢলের পানি প্রবেশ করে। তবে পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে।

আরও পড়ুন

এদিকে সুনামগঞ্জে বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৫২ মিটার। এখনো সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচে আছে। ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৩৮ সেন্টিমিটার। এ সময় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৭৫ মিলিমিটার। একই সময়ে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৫১৩ মিলিমিটার। মূলত চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হলে ভাটিতে থাকা সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নামে। পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের জাদুকাটা, পাটনাই, কুশিয়ারা, নলজুর, চেলা, চলতি, রক্তি, বৌলাই—সব নদ–নদীর পানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে পানি বাড়ছে হাওরে। উজানের ঢলে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলা ও ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলোর কিছু কিছু গ্রামীণ সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।

তবে পানি বাড়লেও বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা করছেন না সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি বাড়বে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে সুনামগঞ্জে বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই। বন্যা হলে স্বল্প মেয়াদে মাঝারি বন্যা হতে পারে।