চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখার পর হবিগঞ্জে সংসদ সদস্য জাহিরের বাড়িতে আগুন
হবিগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরের বাড়ি চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে পাঁচতলা বাড়ির প্রথম ও দ্বিতীয় তলা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। একই সময় জাহিরের বাড়ি লাগোয়া সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মজিদ খানের বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের আশপাশেই ছিলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একসঙ্গে সংসদ সদস্য জাহিরের বাড়িতে ঢুকে ভেতরে থাকা ক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়ে সরিয়ে আনেন। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে সেনা সদস্যরা সংসদ সদস্যের বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেন। এ সময় সংসদ সদস্য ও তাঁর দলের কিছু নেতা-কর্মী বাড়িটির চতুর্থ তলায় আত্মগোপন করে ছিলেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে বিকেলে বিক্ষোভকারীদের মিছিলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গুলি চালালে বিক্ষোভকারীরা তাঁদের ধাওয়া দেন। বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ায় তাঁরা সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর বিক্ষোভকারীরা বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। এরপর বাড়ি থেকে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছিল। আর বাইরে থেকে ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন বিক্ষোভকারীরা। এতে অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। গুলিবিদ্ধ সাতজন হবিগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সরেজমিনে দেখা যায়, আজ দুপুর ১২টার দিকে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সামনে জড়ো হন। প্রায় দুই ঘণ্টা সেখানে অবস্থানের পর তাঁরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁরা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কের উত্তর দিকে চৌধুরী বাজার অভিমুখে রওনা হন। অন্যদিকে শহরের পৌর টাউন হলের সামনে বেলা ১১টা থেকে অবস্থান নিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁদের হাতে লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সমবেত হতে দেখা যায়। সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির, দলের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর চৌধুরীসহ ২০০–৩০০ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা শহরের উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকেন। এলোপাতাড়ি গুলিতে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। পরে বিক্ষোভকারীরা নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তাঁরা সংসদ সদস্য জাহিরের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
বিকেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দলের সভাপতির বাসায় হামলা হয়। আজ আবার হামলা করবে, এমন খবরে আমরা টাউন হলে জড়ো হই। আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য জড়ো হই।’ তবে গুলি চালানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।