শরীফার গল্প বাদ দেওয়া ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’: ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফার গল্প’ শীর্ষক বহুল আলোচিত গল্পটি বাদ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বিষয়টিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’ বলেও মনে করে এই কমিটি। তারা অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিও জানিয়েছে। আজ শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এসব বিষয় উল্লেখ করেছে।
পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফার গল্প’ বাদ দিতে ৪ জুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গণমাধ্যমের তথ্য তুলে ধরে আজকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলেছে, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৩৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ নামক অধ্যায়ে থাকা শরীফার গল্পটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ও গল্পটি বাদ দেওয়ার জন্য এনসিটিবিকে নির্দেশ দিয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ শীর্ষক হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক একটি পাঠ রয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পরে গল্পটি পর্যালোচনা করার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঁচ সদস্যের ওই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুর রশীদ।
এই বিশেষজ্ঞ কমিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তারা বলছে, উচ্চপর্যায়ের এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে কোনো চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও হিজড়া সম্প্রদায়ের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।
‘শরীফার গল্প’টি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে বহুত্ববাদের তত্ত্বের ভিত্তিতে যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হলো, তা প্রথম পর্যায়েই ‘বড় ধাক্কা খেল’ বলে মনে করছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তারা বলছে, গল্পটিকে বাদ দেওয়ার যে নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিয়েছে, তা প্রমাণ করে মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার যে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণুতা) নীতিতে এগিয়ে চলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের ‘নতজানু’ সিদ্ধান্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানুষদের সংগ্রাম ও ইতিহাসকে অশ্রদ্ধারই শামিল বলেও উল্লেখ করেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তারা বলছে, হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার যে নীতিমালা গ্রহণ করেছে, তার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এই বিবৃতিতে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, ফওজিয়া মোসলেম, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, লেখক–সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীসহ অনেকে সই করেছেন।