আগুন লাগা বগি ট্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন করে প্রশংসায় ভাসছেন বৃদ্ধ শাহাবুদ্দিন
ট্রেনের পাওয়ার কারের ভেতরে প্রথমে সামান্য ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখান থেকে দাউ দাউ করে আগুনের শিখা বের হওয়া শুরু করে। আগুনের সেই শিখা অন্য বগিতে ছড়ানোর আগেই ছুটে গিয়ে জ্বলন্ত পাওয়ার কারটি ট্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন করেন মো. শাহাবুদ্দিন (৬৯) নামের এক ব্যক্তি।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় গাজীপুরের শ্রীপুরের সাতখামাইর রেলস্টেশনের কাছে মহুয়া কমিউটার ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে পাওয়ার কার বগি ও যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এতে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা–ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। মো. শাহাবুদ্দিন দ্রুত পাওয়ার কারটি ট্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন না করলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁর সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসা করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মো. শাহাবুদ্দিন শ্রীপুর উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের মো. আবদুল হেকিমের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়েতে লোকোমাস্টার (ট্রেনচালক) পদে চাকরি করতেন। ২০১৭ সালে তিনি অবসরে যান।
ঘটনার বিষয়ে মো. শাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একটি কাজে সাতখামাইর বাজারে এসেছিলেন। মহুয়া কমিউটার ট্রেনটিকে স্টেশনের কাছে থেমে যেতে দেখেন। ছাদ ও ট্রেনের ভেতর থেকে তখন লোকজন লাফিয়ে নামছিলেন। একপর্যায়ে একটি বগিতে আগুন জ্বলতে দেখে তিনি দৌড়ে সেখানে চলে যান। তাঁর কাছে মনে হচ্ছিল, আগুনের তীব্রতা বাড়লে সেটি আশপাশের বগিতে ছড়িয়ে যেতে পারে।
শাহাবুদ্দিন বলেন, মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদে ঝুঁকি জেনেও তিনি জ্বলন্ত বগির পাশে থাকা হুক খুলে দেন। এরপর দ্রুত বের হয়ে এসে ট্রেনে থাকা লোকোমাস্টারকে হাতের ইশারায় ট্রেন সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংকেত দেন। এভাবে জ্বলন্ত বগিটির দুই পাশ থেকে সব কটি বগি আলাদা করে দেন তিনি।
ট্রেনের বগি বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ট্রেনের বগিকে একটির সঙ্গে আরেকটিকে সংযুক্ত ও বিচ্ছিন্ন করার প্রশিক্ষণ তাঁর আছে। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়েতে ট্রেন এক্সামিনার হিসেবে থাকাকালে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পরে লোকোমাস্টার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে এ ধরনের কাজ করতেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন জ্বলতে দেখে কেউ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন না। কিন্তু শাহাবুদ্দিন কোনো কিছু না ভেবেই এগিয়ে গিয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন।’ অপর বাসিন্দা আশরাফ আলী বলেন, বৃদ্ধ শাহাবুদ্দিন এগিয়ে না এলে হয়তো আগুন ছড়িয়ে যেতে পারত।
শ্রীপুর রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন প্রবীণ মানুষ রেলের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এটা যে কত বড় কাজ, তা বলে বোঝাতে পারব না। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এটাই প্রকৃত মানবিকতা। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন সাবেক কর্মী। আমি এখন সেই রেলেই কাজ করছি। আমার গর্ব হচ্ছে।’