ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নালা বন্ধ, জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি
ময়লা-আবর্জনা জমে আটকে আছে নালা। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি উপচে দেখা দিচ্ছে চরম ভোগান্তি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী বাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত অংশে জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেক আগে থেকে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সড়কটির দুই পাশে নালা নির্মাণ করেছিল বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন নালাগুলো পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। কোথাও ঢাকনা নেই, কোথাও ময়লা-আবর্জনা আটকে বন্ধ হয়ে গেছে পানি চলাচল। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি উপচে দেখা দিচ্ছে চরম ভোগান্তি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা। মহাসড়কের হোসেন মার্কেট এলাকায় আনুমানিক ১০০ মিটার জায়গাজুড়ে জমেছিল বৃষ্টির পানি। তলিয়ে যায় ফুটপাত। ডুবে যায় সড়কের ওই অংশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। পথচারী চলাচল করতে পারছিল না। গর্তে আটকে যাওয়ার ভয়ে যানবাহনগুলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিল। এতে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
সড়ক–সংলগ্ন ইউনিয়ন ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আসমা আক্তার নামের এক নারী। ফুটপাত তলিয়ে যাওয়ায় হাঁটতে পারছিলেন না। প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে রিকশা ডাকছিলেন। কিন্তু কোনো রিকশাও আসছিল না। একপর্যায়ে জুতা হাতে নিয়ে, পানিতে ভিজেই গন্তব্যে রওনা দেন তিনি।
কতবার আমরা বিআরটির লোকজনকে বলছি ড্রেন ঠিক করতে, তারা কোনো কথাই শোনে না।শাহাদাত হোসেন, হোসেন মার্কেট এলাকার স্থানীয় দোকানি
এ সময় প্রচণ্ড ক্ষোভ ঝেড়ে আসমা আক্তার প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‘এইড্যা কোনো রাস্তার অবস্থা হতে পারে না। বৃষ্টির জন্য ব্যাংকে আটকা পড়েছিলাম। এরপর বের হয়েই দেখি এ অবস্থা। আমাদের কষ্টের কোনো মূল্য নেই।’
রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত বিআরটি বা বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। কিছুটা উড়ালপথ, কোথাও বিদ্যমান সড়কে বিশেষ বাস দিয়ে ২০১৬ সালে নতুন এ ব্যবস্থা চালুর কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, বিআরটি চালু হলে ঘণ্টায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। যানজট, সিগন্যাল কিংবা অন্য কোনো বাধায় বাস আটকে থাকবে না। কিন্তু ১১ বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় এখন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষজনকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পথ শুধু উত্তরা, টঙ্গী ও গাজীপুরের মানুষই ব্যবহার করে না, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব জেলার মানুষের মূল পথ এটি। ঢাকার সঙ্গে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এমনকি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগেরও বিকল্প পথ এটি। উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের একটা বড় অংশ চলে উত্তরা-আবদুল্লাহপুর হয়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পানিনিষ্কাশনের জন্য মহাসড়কটির দুই পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে নালা। কিন্তু নালাগুলোর অবস্থা ভালো নেই। ময়লা-আবর্জনা জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি জমে সড়কের বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এর মধ্যে বেশি খারাপ অবস্থা দেখা যায়, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট, নগরের ছয়দানা, বাসন সড়ক, মালেকের বাড়ি, সায়েদাবাদ, তারগাছ, ভোগড়া বাইপাস, মিল গেটসহ বেশ কয়েকটি জায়গায়।
স্থানীয় বাসিন্দা, এ পথের নিয়মিত যাত্রী ও পরিবহনচালকদের দাবি, সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি নালাই এখন সমস্যার কারণ। এই সড়কে অনেক আগে থেকেই জলাবদ্ধতার সমস্যা। নালা নির্মাণের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু এখন হয়েছে আরও উল্টো। নালাগুলো পড়ে আছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় বৃষ্টি হলেই জমে যাচ্ছে পানি।
হোসেন মার্কেট এলাকার স্থানীয় দোকানি শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘একটু বৃষ্টি পড়লেই আমাদের অচলাবস্থা দেখা দেয়। মানুষ চলাচল করতে পারে না। আমাদের বেচাবিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। কতবার আমরা বিআরটির লোকজনকে বলছি ড্রেন ঠিক করতে, তারা কোনো কথাই শোনে না।’
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সড়কে এখনো স্থায়ী কাজ শুরু হয়নি। স্থায়ী কাজ করা শেষ হলে আর এ সমস্যা থাকবে না। তা ছাড়া কোথাও ময়লা–আবর্জনা জমে থাকলে সেটাও নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে।