ঈদের জন্য কাপড় কিনতে কয়েক দিন ধরেই বরিশাল নগরের বিভিন্ন বিপণিবিতানে ঘুরেছেন নুসরাত জাহান। পরিবারের অন্যদের জন্য কেনাকাটা করেছেন। কিন্তু নিজের জন্য কিনেছেন সবার শেষে। কারণ, পোশাক পছন্দ হলেও দামটা বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। তিনি নগরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
নুসরাত বলেন, ‘দুই-তিনবার আড়ং ও অন্য সব ব্র্যান্ডের শোরুমে গিয়েছি। নিজের পছন্দের পোশাক মিললেও দাম এত বেশি যে আর কেনা হয়ে ওঠেনি। এই শেষ সময়ে অনলাইন থেকে একটি আর বিপণিবিতান থেকে আরেকটি জামা কিনেছি।’
ঈদের বাকি হাতে গোনা কয়েক দিন। শেষ মুহূর্তে কেনাকাটা করতে বিপণিবিতানে ভিড় জমিয়েছেন মানুষ। সন্ধ্যার পর থেকে জমজমাট হয়ে ওঠে নামীদামি ব্র্যান্ডের শোরুমগুলো। আর সব সময় ভিড় লেগে থাকে শহরের ফুটপাত ও অন্য দোকানে। ক্রেতারা বলছেন, দোকানে হরেক রকম কাপড় উঠলেও দাম গতবারের চেয়ে বেশি।
চকবাজার, গির্জা মহল্লা এলাকার বিপণিবিতানগুলোর বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে আলাপ হলে তাঁরা বলেন, মেয়েদের থ্রি-পিসে এবার কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। পি-কে, কাল্পনিক, লাভ স্টোরি নামের নতুন নকশার থ্রি-পিসের যথেষ্ট চাহিদা আছে এবার। তবে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে আলিয়াকাট ও নায়রাকাট। ছেলেদের পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে।
পোশাক কিনতে আসা কলেজ ছাত্রী জান্নাতুল নাইমা বলেন, প্রথম রোজার দিকে মার্কেটে এলেও কেনাকাটা করা হয়নি। শেষ সময়ে এসে অনেক ঘুরে রোববার তিনি আলিয়াকাট নামের একটি থ্রি-পিস কিনেছেন। তবে এবার পোশাকের দাম আগের বছরের তুলনায় খুব বেশি। সাধ্যের মধ্যে মেলানো যায় না বলে অনেক ঘুরেছেন।
গির্জা মহল্লা এলাকার একটি পোশাক বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মকবুল হোসেন রোববার দুপুরে জানান, রমজানের শুরুতে টুকটাক বেচাবিক্রি শুরু হলেও, ১৫ রমজানের পর ভিড় কিছুটা বাড়ে। তবে ১ এপ্রিল শুরু হয়েছে ঈদবাজারের মূল বেচাকেনা।
নগরের গির্জা মহল্লা এলাকার ভেনাস, ইসলামিয়া মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা দোকানগুলো। দোকানগুলোর কর্মচারীদের দম ফেলার সময় নেই। ইসলামিয়া মার্কেটের ভূঁইয়া ক্লথ স্টোরের ব্যবস্থাপক জুয়েল হোসেন রোববার দুপুরে বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ঈদবাজারে ক্রেতাদের ব্যাপক সমাগম হচ্ছে। দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না। এবার বিক্রিও ভালো হচ্ছে। এবার দেশি থ্রি-পিসের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তানের সিল্ক, জর্জেট, তসর, সুতি, অরগাঞ্জার চাহিদা বেশি। দামও অনেকটা সাধ্যের মধ্যে। ২ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে এসব থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে।
চকবাজার, বাজার রোডের শাড়ির দোকানের বিক্রেতারা বলেন, এ বছর ভারত থেকে গুজরাটি সিল্ক, বাহা সিল্ক, মণিপুরি কাতান, মণিপুরি সুতি, পিউর সিল্ক, জর্জেট ও নেটের ওপর কাজ করা শাড়ি আমদানি করেছেন। তবে এবার বেশির ভাগ ক্রেতার পছন্দের তালিকায় রয়েছে ঢাকাই জামদানি, টাঙ্গাইল জামদানি, তাঁতের শাড়ি, সফট সিল্ক আর জুট জামদানি। এগুলোর দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। এ বছর ঈদে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার দামি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি।
বরিশালের ঈদবাজরে কেনাকাটায় এবার ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে নামীদামি ব্র্যান্ডের শোরুমগুলো। আড়ং এবার বরিশালে বিশাল শোরুম খুলেছে। নগরের জীবনানন্দ দাশ সড়কে এই প্রতিষ্ঠান ঘিরে রমজানের শুরু থেকেই ক্রেতাদের বেশ আগ্রহ।
গতকাল রোববার দুপুরে নগরের নদীবন্দর ও স্টিমারঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ডিসি মার্কেট (হাজি মহসিন মার্কেট) ও সিটি মার্কেটে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তদের উপচেপড়া ভিড়। ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, দক্ষিণ চকবাজার এলাকার ফুটপাতেও শেষ সময়ে দিন-রাত সমান ভিড় থাকছে।
নগরের কাঠপট্টি এলাকার থান কাপড়ের দোকানগুলোতে তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। কারণ, যাঁরা কাপড় কিনে পোশাক তৈরি করবেন, তাঁরা আগেভাগেই কেনাকাটা শেষ করেছেন। এদিকে জুতার দোকানগুলোতে ২০ রোজার পর থেকেই বেচাবিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
ডিসি মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘সামান্য ব্যবসা করে পরিবার চালাই। ঈদ সামনে। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি আছে। নিজেরা না নিলেও ওদের তো দিতে হবেই। তবু সাধ্যের মধ্যে সবাইকে কাপড় দিতে হবে।’