যশোরে ২ মাসে ৮ শতাংশ ধান সংগ্রহ
সরকারিভাবে ২৩ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলে। তবে লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ শতাংশ সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করা গেছে।
যশোরে সরকারিভাবে আমন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ২৮৩ মেট্রিক টন। এবার ধানের দাম গতবারের চেয়ে ২ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। এরপরও ধান সংগ্রহ করা যায়নি। সংগ্রহের শেষ দিন পর্যন্ত যশোরের খাদ্যগুদামগুলো মাত্র ৪১৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৮ শতাংশের কম।
সরকারিভাবে ২৩ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলে। তবে এ সময় ১৪ হাজার ৪৬৭ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সেদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৩ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ শতাংশ।
জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, আটটি উপজেলার মধ্যে সদর, শার্শা, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, বাঘারপাড়া ও কেশবপুরে কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে এবং অভয়নগর উপজেলায় ‘আগে এলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা হয়েছে। এই সময়ে জেলার হাটবাজারে মোটা ধান ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২২০ টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ২৮০ টাকা পর্যন্ত মণ দরে বিক্রি হয়েছে। সরকার ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ধান কেনে। এবার সরকারি গুদামে ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতার ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একজন কৃষক সর্বনিম্ন ১২০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন পর্যন্ত ধান সরকারি গুদামে বিক্রি করতে পারেন।
■ সরকার সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা এবং ধান ৩০ টাকা কেজি দরে কিনেছে। ■ ৫ হাজার ২৮৩ মেট্রিক টনের বদলে ৪১৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, কৃষকদের একটি করে কৃষি কার্ড আছে। ওই কার্ডে কৃষকের নাম, পরিচয় এবং তাঁর চাষ করা জমির পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে। জেলায় কার্ডধারী কৃষকের ব্যাংকে ১০ টাকার হিসাব রয়েছে। ধান কেনার পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেওয়া হয়। কৃষক ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলেন।
কৃষকেরা বলেন, গুদামে ধান বিক্রি করা বেশ ঝামেলার। তা ছাড়া মোটা এবং চিকন ধানের বাজারদর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি ছিল। গুদামে ধান পৌঁছে দিতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে, পরিশ্রমও হয় বেশি। এ জন্য তাঁরা গুদামে ধান বিক্রি করতে চান না।
বাঘারপাড়া উপজেলার আগড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মজিদ এবার ৪ বিঘা (৫২ শতকে বিঘা) জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন। ধান উৎপাদনে তাঁর বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছিল গড়ে ২৩ হাজার টাকা। ওই জমি থেকে তিনি ১০৪ মণ ধান পান। ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে তিনি সব ধান বাড়ির পাশের বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে অল্প কিছু হলেও লাভ হয়েছে তাঁর।
আবদুল মজিদ বলেন, তাঁর বাড়ি থেকে সরকারি গুদামের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এক মণ ধান সেখানে নিয়ে যেতে খরচ পড়ে ৩০ টাকা। আর বাড়ির পাশের বাজারে এক মণ ধান নিতে খরচ পড়ে ১০ টাকা। বাজারে যাচাই করে ধান বিক্রি করা যায়। টাকাও নগদ পাওয়া যায়। তা ছাড়া মণপ্রতি সরকারি দাম আর বাজার দাম প্রায় একই। বাজারে আরও ভালো দামও পাওয়া যায়। আবার সরাসরি ধান গুদামে নিয়ে গেলে ধানের মান খারাপ বলে অনেক সময় ধান ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এতে ক্ষতি হয়। এসব কারণে গুদামে ধান বিক্রি করেননি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে যশোর জেলায় কৃষকের কাছ থেকে ৫ হাজার ২৮৩ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৪ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সেদ্ধ চাল ১৪ হাজার ৪৬৭ মেট্রিক টন এবং আতপ চাল ৪০৪ মেট্রিক টন। সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা, আতপ চাল ৪৩ টাকা এবং ধান ৩০ টাকা কেজি দরে কেনা হয়েছে। সেদ্ধ চাল সরবরাহের জন্য ১০২ জন চালকলের মালিক এবং আতপ চাল সরবরাহের জন্য ১ জন চালকলের মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁরা প্রায় ৯৪ ভাগ ধান সরবরাহ করেছেন। তবে এক ছটাকও আতপ চাল সংগ্রহ করা যায়নি। তাই আতপ চাল সংগ্রহের জন্য ১০ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
যশোর জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু বলেন, আমন সংগ্রহ অভিযানে সরকারিভাবে ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে ধান বেচাকেনা হয়েছে। তা ছাড়া খাদ্যগুদামগুলো উপজেলা সদরে হওয়ায় ধান পরিবহনে কৃষকের ব্যয় বাড়ে। সে জন্য কৃষক বাড়ি থেকে এবং পাশের বাজারে প্রায় একই দামে ধান বিক্রি করেছেন। তবে চুক্তিবদ্ধ চালকলের মালিকেরা বেশ ভালোই চাল সরবরাহ করেছেন।