বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়ার নকআউট পর্বের খেলা চলছিল কাতারে। কিন্তু এর উত্তাপ ছড়াচ্ছিল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটায় শুরু হওয়া খেলাটি দেখতে ভিড় জমেছিল বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত বড় পর্দার সামনে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে, কর্মকর্তা-কর্মচারী, আশপাশের বাসিন্দারাও ভিড় জমান এখানে। ফুটবলপ্রেমীদের উল্লাসে গভীর রাতে মেতে উঠেছিল ক্যাম্পাস।
বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোগে স্থাপিত বড় পর্দায় খেলা দেখতে বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর পর থেকে ভিড় জমে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ভিড় বেশি থাকে বড় দলগুলোর খেলার দিনে। এমন আয়োজনে খুশি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোতে টেলিভিশন আছে, এরপরও বড় পর্দায় খেলার আয়োজন করায় খুশি তাঁরা।
এদিকে শীতের দিনে খেলার বিরতিতে চা-পিঠার আয়োজনও জমে ওঠে। এ সময় জমে ভিন্ন দলের সমর্থকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক।
গতকাল রাত একটায় খেলা শুরু হওয়ায় প্রথম থেকে ভিড় বাড়ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে। খেলা শুরু হওয়ার পর ভিড় বাড়তে থাকে। হালকা ঠান্ডা ও হালকা কুয়াশার মধ্যে অনেককে চাদর এবং গরম কাপড় পরে আসতে দেখা গেছে।
ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বড় পর্দায় খেলা উপভোগ করতে বেঞ্চ, চেয়ার পেতে বসেছিলেন খেলাপ্রেমীরা। আবার কেউ দাঁড়িয়ে খেলা উপভোগ করছিলেন। খেলা দেখতে আসা অনেকের গায়ে ছিল আর্জেন্টিনার জার্সি। তবে কয়েকজনকে দেখা গেছে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে দিয়ে খেলা দেখতে।
নকআউট পর্বের খেলায় আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়ার খেলা প্রথম থেকেই জমে উঠেছিল। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের সময় উত্তেজিত হয়ে পছন্দের খেলোয়াড়দের নাম ধরে ডেকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন দর্শক সারিতে থাকা ব্যক্তিরা। আবার গোল পোস্ট লক্ষ্য করে কিক দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত দিয়ে ‘হায়, হায়’ করছিলেন অনেকে।
খেলার ৩৫ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসির গোলের পর ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসব শুরু হয়। আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা ‘মেসি, মেসি’ বলে উল্লাস করতে থাকেন।
চাদর গায়ে দিয়ে বালুচর এলাকা থেকে খেলা দেখতে এসেছিলেন রেজাউল ইসলাম নামের এক ফুটবলপ্রেমী। তিনি বলেন, আর্জেন্টিনার খেলা ভালো লাগে। ঘরে ছোট টেলিভিশন আছে, সেটিতে খেলা দেখতে ভালো লাগে না। এ জন্য ঘরের পাশে বড় পর্দায় খেলা দেখেন তিনি। এতে ভালোই লাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরেনারি অনুষদের ছাত্র আবু সাঈদ সজীব ব্রাজিলের সমর্থক হলেও লিওনেল মেসিকে ভালো লাগে তাঁর। গতকাল রাতে গায়ে ব্রাজিলের জার্সি চড়িয়ে তিনি বলেন, মেসির রেকর্ডের দিনে মেসির জন্য আর্জেন্টিনাকে সমর্থন জানাচ্ছেন বলে দাবি তাঁর।
একই দলের সমর্থক নির্জন সরকার বলেন, ৩৫ মিনিটের মাথায় মেসির দেওয়া গোলটি দেখার মতো ছিল না। অস্ট্রেলিয়া ভালো খেললেও ফিনিশিং করতে পারেনি। ভালো ফিনিশার হলে আর্জেন্টিনাকে উল্টো কয়েকটি গোল দিত। তবে তিনি চান, আর্জেন্টিনা টিকে থাকুক। সবকিছু ঠিক থাকলে ব্রাজিলের সঙ্গে আর্জেন্টিনার সেমিফাইনালে খেলার কথা। তবে সে দিন ব্রাজিল আর্জেন্টিনাকে হারাবে, সেই আশা তাঁর।
আশিকুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, তাঁর বাড়িতে সবাই আর্জেন্টিনার সমর্থক। এ জন্য ছোটবেলা থেকেই আর্জেন্টিনা দল তাঁর প্রিয়। এখন মেসি থাকায় আরও ভালো লাগে দলটিকে।
খেলাকে কেন্দ্র করে চিতই পিঠা তৈরি করছিলেন বিক্রেতা জালাল উদ্দিন। তিনি নিজেকে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থক দাবি করলেন। যদিও তিনি খেলোয়াড়দের নাম জানেন না। বিশ্বকাপ শুরুর পর বড় দলের খেলাকে কেন্দ্র করে বেচাকেনা ভালো হয়। গতকাল রাত একটার পর থেকে আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় ৭০০ টাকার পিঠা বিক্রি করেছেন বলে জানালেন তিনি।
মধ্য বিরতির পর ফের খেলা শুরু হলে একাধিক সুযোগ নষ্ট হয় আর্জেন্টিনার। দর্শক সারিতে হতাশা ভর করে। শেষ সময়ের কিছু আগে অস্ট্রেলিয়া একটি গোল দেয়। এ সময় চারপাশ নীরব হয়ে যায়। তবে আরেক গোল দিয়ে আর্জেন্টিনা শেষ পর্যন্ত জয়ী হলে চারপাশে উল্লাসের শব্দ মেলে। ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীসহ ফুটবলপ্রেমীদের।