‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই’ বক্তব্য দেওয়া নেতার মুক্তির দাবিতে নরসিংদীতে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ
নরসিংদীতে গ্রেপ্তার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আহসানুল ইসলাম ওরফে রিমনের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। নরসিংদী-১ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশে ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই’ বলে বক্তব্য দেওয়ার পর আহসানুল গ্রেপ্তার হন। আজ শনিবার দুপুরে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে জেলা, উপজেলা, শহর ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের অন্তত পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহসানুলের মুক্তি দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন।
গত বুধবার দুপুরে নরসিংদী ক্লাবে নরসিংদী-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের মতবিনিময় সভা হয়। ওই সভায় জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আহসানুল বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র চিনে না। মাইরের ওপর কোনো ওষুধ নাই। পোলাপাইনও জানে, কীভাবে পিটাইতে হয়। কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র ছাত্রলীগ মানে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কীভাবে পিটাইতে হয় হে ওই আমগরে শিখাইছে, হেরে আমরা হেমনেই পিটাইমু। এই আসনের কোনো এলাকায় তাঁদের জায়গা দেওয়া যাবে না।’ তাঁর এই বক্তব্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন সদরের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক। এই মামলার একমাত্র আসামি আহসানুল। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে আহসানুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ওই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, জানতে চান নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্য নরসিংদীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদুর রহমান নাহিদ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা থেকে আহসানুলকে গ্রেপ্তার করে। বিকেল ৫টার দিকে তাঁকে নরসিংদীর আদালতে তোলা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
আহসানুলের মুক্তির দাবিতে আজ সকাল থেকেই জেলা, উপজেলা, শহর ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্রসংসদ ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে যান। তাঁদের হাতে ছিল আহসানুলের মুক্তির দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন। পরে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা বক্তব্য দেন। এ সময় শতাধিক পুলিশ সদস্যকে সেখানে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
এ সময় বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল আহমেদ, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল আলম ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়েত সরকার, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম ওয়াজেদ ও সাধারণ সম্পাদক আশিক আলম, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাকিব হাসান প্রমুখ।
ছাত্রলীগ নেতারা বক্তব্যে বলেন, আজ যাঁরা সদর আসনে বিএনপির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান বা তাঁদের সহযোগিতায় স্বার্থসিদ্ধি করতে চান, এটা তাঁদেরই চক্রান্ত। আহসানুল ইসলামের শরীরের একটি লোমও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তাঁদের একজনও শান্তিতে বাড়িতে থাকতে পারবেন না। ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিট তাঁর মুক্তির আগপর্যন্ত রাজপথে আছে। আগামীকাল রোববারের মধ্যে যদি তাঁর জামিন মঞ্জুর না হয়, দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এরপর ছাত্রলীগের সবাইকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে যেতে হবে।
এ সময় ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী ‘রিমন ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘রিমন ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘আমরা সবাই মুজিব সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল আহমেদ বলেন, ‘একটি বক্তব্যের কারণে আমাদের সভাপতি আজ কারাগারে। আমরা বুঝতে পারছি না, এটা কার ইঙ্গিত, কীসের ষড়যন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে আমাদের একটাই দাবি, দ্রুত তাঁকে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে নির্বাচনী আইন ভঙ্গের অপরাধে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আহসানুল ইসলাম কারাগারে রয়েছেন। তাঁর মুক্তির দাবিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন শুনেছি। তাঁর মুক্তির বিষয়টি যেহেতু আদালতের ব্যাপার, এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’