রাজশাহীর পুঠিয়ায় নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতার জেরে আজ বৃহস্পতিবার নির্ধারিত ঝলমলিয়া হাট বসেনি। নিরাপত্তা না থাকায় দোকান খোলেননি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পুলিশ সকাল থেকে চেষ্টা করেও ব্যবসায়ীদের দোকান খোলাতে পারেনি।
পুলিশ বলছে, নিরাপত্তার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দোকান খুলছেন না। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সহিংসতায় দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুঠিয়া থানায় চারটি অভিযোগ করেছে দুই পক্ষ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গোলাম সারোয়ার রাসেলের (৩০) বাড়ি উপজেলার কানাইপাড়া এলাকায়। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত পুঠিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ মোল্লার পক্ষে কাজ করেন। অন্যদিকে আহত হাসান আলীর (৩০) বাড়ি ঝলমলিয়া এলাকায়। তিনি পরাজিত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হকের (মাসুদ) পক্ষে নির্বাচন করেন।
পুঠিয়ায় এবার আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা প্রার্থী হয়েছিলেন। একজন বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম হিরা (বাচ্চু)। অন্য দুজন হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক ও বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সামাদ মোল্লা। তাঁদের মধ্যে ২৬ হাজার ৬৬৫ ভোট পেয়ে আবদুস সামাদ মোল্লা জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আহসান উল হক পেয়েছেন ২৩ হাজার ৬৭৯ ভোট। আহসান উল হকের বাড়ি ঝলমলিয়া গ্রামে। রাজশাহী-ঢাকা মহাড়কের পাশেই ঝলমলিয়া হাট। আজ সাপ্তাহিক হাটের দিন ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝলমলিয়া হাটের সঙ্গেই আহসান উল হকের সমর্থক আলমগীর হোসেনের একটি টিকিট কাউন্টার আছে। ভোটের পরদিন সকালে জয়ী প্রার্থীর সমর্থক গোলাম সারোয়ার এসে আলমগীরকে একবার শাসিয়ে যান। আবার সন্ধ্যায় এসে আলমগীরের কাছে ২০ হাজার টাকা পাওনা আছে জানিয়ে টাকা ফেরত চান। আলমগীর কিসের টাকা পাবেন জানতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোলাম সারোয়ার তাঁর ওপরে চড়াও হন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ দুপুরে ঝলমলিয়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, শুধু সবজির বাজার বসেছে। দু–একটি চায়ের দোকান, ওষুধ ও খাবারে দোকান খোলা। বাকি সব দোকানপাট বন্ধ। হাটচালি একেবারে ফাঁকা। পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান দুই গাড়ি পুলিশ নিয়ে ঝলমলিয়া বাজারে টহল দিচ্ছেন। তিনি হাটের গলিতে গলিতে ঘুরে পরিস্থতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ফোন দিয়ে ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার জন্য ডাকছেন। কিন্তু কোনো ব্যবসায়ী দোকান খুলতে আসছেন না।
হাটের ভেতরে ওসি সাইদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রেখেছেন। তিনি নিরাপত্তা নিশ্চিতের ঘোষণা দিলেও তাঁরা আসছেন না। উভয় পক্ষ থানায় অভিযোগ করেছে। তদন্তে যা পাওয়া যায়, সেটি পরে দেখা যাবে। তিনি বলেন, ‘এখন দোকান খুলতে কোনো অসুবিধা নেই। এটা কারও ব্যক্তিগত বাজার নয় যে ভয় দেখিয়ে দোকান বন্ধ করে রাখবে।’
এ বিষয়ে জয়ী চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ মোল্লার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কয়েকবার ফোনে ব্যস্ত পাওয়া যায়। একবার অন্য ব্যক্তি ফোন ধরেন। পরাজিত প্রার্থী আহসান উল হক প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ চেষ্টা করে বিকেলে চার-পাঁচটি দোকান খোলার ব্যবস্থা করেছে। তাঁরা সন্ধ্যায় বসবেন। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে হাট বসবে।